একজন “স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ” এবং একটি “স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠন।”
প্রকাশিতঃ ৬:৩৮ অপরাহ্ণ | আগস্ট ১৭, ২০১৮ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৬৯০ বার
মোঃ আজহারুল ইসলাম, ময়মনসিংহ থেকে:
কবি কুসুমকুমারী দাশ তাঁর “আদর্শ ছেলে” কবিতায় জানতে চেয়েছিলেন- ” আমাদের দেশে হবে সেই ছেল কবে,/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?”
আমরা বর্তমান নৈতিক অধঃপতন আর স্বার্থান্বেষী সমাজের বাঁকে বাঁকে এখনো কিছু মানুষের দেখা পাই যারা একেবারে ভিন্ন চিন্তা,মন-মননের অধিকারী, যাদেরকে দেখলে কবি তার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন বলে প্রসন্ন চিত্তে দিনাতিপাত করতেন। ঘোর লাগা এই সমাজের বুকে “ফয়সালেরা” ব্যতিক্রম। আজ একজন “ফয়সাল”-এর কথা বলবো, আপনাদের দিয়ে দেবো কিছু স্বপ্নভর্তি বাক্স উপহার আর জানিয়ে দেবো তার স্বপ্নের এক সংগঠন “প্লাজমা ডোনারস’ সোসাইটি বাংলাদেশ”, স্বেচ্ছায় রক্তদান করার একটি সংগঠন-এর কথা। ফয়সালের সাথে হঠাৎ পরিচয়, অবশ্য তার সাথে মানুষদের এমন পরিচয় হঠাৎই হয়। আমার নানু হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ- রক্তের দরকার ছিল জরুরী, কিন্তু কোথাও মিলছিল না। কোন মাধ্যমে জেনে সে-ই আমাকে কল দেয়। তার বন্ধু সজীবকে সঙ্গে করে হাজির হয় আমাদের কাছে। এমনই রাত-বিরাত নেই, জরুরী কোন রুগীর কথা শোনলেই ডোনার খুঁজে বের করতে নাওয়া খাওয়া ভুলে যায় ছেলেটি!
ফয়সাল আহমেদ নামের শেরপুরের এই তরুণ কলেজে পড়া অবস্থায় গড়ে তোলে “প্লাজমা ডোনারস’ সোসাইটি বাংলাদেশ ” নামক স্বেচ্ছায় রক্ত দাতাদের সংগঠন। “রক্তের অভাবে যাবে না প্রাণ/ স্বেচ্ছায় করবো রক্ত দান” এই স্লোগ্নানকে নিয়ে যার পথচলা, বর্তমান ডোনার সংখ্যা ৩০০+ এবং অনলাইন, অফলাইনে সমানভাবে সক্রিয় তাদের টিম। এ পর্যন্ত প্রায় ১০০০ জন ব্যক্তিকে রক্তের ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছে উক্ত সংগঠন বলে জানান, এর সাংগঠনিক সম্পাদক ও এর প্রতিষ্ঠাতা ফয়সাল আহমেদ। বর্তমানে তাদের ৬টি সক্রিয় শাখা রয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং এর বাইরেও। শাখাটিমগুলো কাজ করছে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল, রংপুর এবার ঢাকায়। সংগঠনে দুইজন ডাক্তার এবং একজন সাংবাদিক রয়েছেন উপদেষ্টা হিসেবে। প্রতি সদস্য মাসিক ৩১/- হারে নামমাত্র ফি দিয়ে সংগঠনের খরচ চালিয়ে নিচ্ছেন। ভালো পৃষ্ঠপোষকতা এবং সাহায্যের হাত পেলে এই সংগঠন তাদের কাজের গতি ও পরিধি আরো ত্বরান্বিত করতে পারতো বলে আক্ষেপ করেন ফয়সাল। এ যাবত মাত্র একটি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন আয়োজন করতে পেরেছে তারা, চলতি আগস্ট মাসে নালিতাবাড়ি উপজেলায় প্রায় ৫০০ জন মানুষের ব্লাড গ্রুপ টেস্ট করা হয়। তাদের কার্যক্রম এবং লক্ষ্য শুধু যে ব্লাড ডোনেটিং-এ সীমাবদ্ধ তা নয়! এছাড়াও দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদেরকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, বাল্যবিবাহ এবং ইভটিজিং প্রতিরোধ, যৌতুক নিরোধ কার্যক্রম, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সচেতনতা গড়ে তোলা সহ আশ্রয়হীন শিশুদের নিয়ে কাজ করার মতো ব্যাপক চিন্তা ধারাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। কী চিন্তা ধারণা থেকে তার এই উদ্যোগ জানতে চাইলে ফয়সাল বলেন, স্কুল জীবন থেকেই কিছু একটা করার ভাবনা তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো। বন্ধুদের না পাওয়া, দরিদ্রতার কশাঘাত তাকেও আঘাত করতো নীরবে, নির্ভৃতে। বেশি কিছু করতে না পারার সাধ আর সাধ্য তার মনকে ছোট করে দিত। তার পিতামাতাও অনেক সহযোগীতা করতো ছেলের এই সহযোগীতামূলক মনোভাবে। কলেজে উঠেই সংগঠন নিয়ে ভাবনা, এবং তার পর থেকেই শুরু পথচলা। বলেছিলাম এই রিপোর্ট প্রকাশের পরে মানুষ হয়ত আরো জ্বালাবে, অনেকেই নতুন করে জানবে, ফয়সালের উত্তরটি ছিল, “….দিনশেষে ক্লান্তির মাঝে স্বস্তি খুঁজে নেই ঐ পীড়িত মানুষগুলোর কান্নার ভীড়ে। একটু জ্বালালো তাতে কী!” এ জ্বালায় জ্বলতে মোটেও আপত্তি নেই ফয়সাল আর তার “প্লাজমা” টিমের কারো।
তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারেন নিম্নের নাম্বারগুলোতে:
01984955330
01955428204
01993254243
email/facebook এ খুঁজে নিন:
Facebook Group : প্লাজমা ডোনার’স সোসাইটি বাংলাদেশ (PDSB)
পরিশেষ, ফয়সালের মতো তরুণরাই কুসুমকুমারী দাশের প্রশ্নের উত্তর। এরাই বাংলাদেশের সোনার ছেলে, যাদের হাত ধরে এক নতুন বাংলা গড়ে উঠবে অপার সম্ভাবনার। এই তরুণেরা পারবে এক মানবিক পৃথিবী উপহার দিতে আমাদের। যারা মানুষের দু:খে কাঁদতে জানে, মানুষের সুখে হাসতে জানে, কোন অভিনেতার মতো মেকী হাসি-কান্না নয়; মনের গভীরের একদম খাঁটি অনুভূতির প্রকাশ। এই সকল তরুণদের প্রতি টুপি খোলা অভিবাদন।