বৃদ্ধকে এলাকাছাড়া করতে তৎপর একটি চক্র
প্রকাশিতঃ ১:৪৬ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৩ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ১৫৬ বার
নালিতাবাড়ী সংবাদদাতা: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম সমশ্চুড়া গ্রামের সত্তোরঊর্ধ অসহায় বৃদ্ধ মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী বৃদ্ধা আঙ্গুরী বেগম। তাদের শেষ আশ্রয় ৮ শতাংশ ভিটেমাটি। মজুরি করে কোনমতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন ‘ক’ তফসীলভুক্ত ৩৬ বছর যাবত ভোগদখলে থাকা ওই জমিতে। তবে সম্প্রতি ওই জমিসহ বসতবাড়িতে লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর। নানা কৌশল ও চাপ প্রয়োগ করে এলাকাছাড়া করতে উঠেপড়ে লেগেছে চক্রটি। ফলে শেষ বয়সে এসে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার ভয়ে প্রতি মুহূর্ত কাটে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ওই দম্পতির। এমতাবস্থায় থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছে পরিবারটি।
থানায় লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৩৬ বছর যাবত পশ্চিম সমশ্চুড়া গ্রামে পাকা প্রধান সড়কের পাশে ‘ক’ তফসীলভুক্ত ৮ শতাংশ জমিতে বসবাস করে ভোগদখল করছেন দরিদ্র বৃদ্ধ দম্পতি মতিউর রহমান ও আঙ্গুরী বেগম। সম্প্রতি প্রতিবেশি প্রবাসে থাকা রাশেদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী খাদিজার নজর পড়ে ওই জমিতে। বাড়ি প্রবেশের জন্য সরকারী রাস্তা থাকা সত্বেও নিজেদের সুবিধার্থে রাস্তা ভোগদখলে রেখে বৃদ্ধ দম্পতির বসতবাড়ির সীমানায় ঢুকে অত্যাচার চালায়। একপর্যায়ে ওই ভিটেমাটি কিনে নিতে কৌশলে স্থানীয় কতিপয় চক্রের শরণাপন্ন হয় খাদিজা। নানা চাপে বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ মতিউর ভিটেমাটি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে সিদ্ধান্ত নেন। এরপর একই গ্রামের অপরাংশে বসবাসকারী আইয়ুব আলী প্রথমে ওই ভিটেমাটি ৬ লাখ টাকায় চুক্তি করে স্থানীয় দলিলে ৬ লাখ টাকা পরিশোধ দেখিয়ে ৪ লাখ টাকা নগদ বিনিময় করেন। বাকী ২ লাখ টাকা পরিশোধ করে দলিল লেখকের কাছ থেকে দলিল হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু জমি বিক্রেতা মতিউরের অগোচরে ২ লাখ টাকা পরিশোধ না করেই দলিল নিজের দখলে নেন আইয়ুব আলী। পরবর্তীতে গোপনে ওই দলিলমূলে প্রবাসী রাশেদের ভাতিজা রবিউল ইসলামকে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায় লিখে দেন। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি ওই বৃদ্ধকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে আসবাবপত্র তছনছ করে বসতবাড়ি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আইয়ুব আলী ও প্রবাসীর স্ত্রী খাদিজা গং। এমতাবস্থায় বৃদ্ধ মতিউর ওই দিনই আইয়ুব আলী, খাদিজাসহ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে নালিতাবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী বৃদ্ধ মতিউর জানান, আইয়ুব আলী ও খাদিজারা মিলে ঘরের সব আসবাবপত্র বের করে দিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে। ঘরে রাখা জমি বিক্রির ৪ লাখ টাকারও খোঁজ পাচ্ছেন না তিনি।
সরেজমিনে গেলে একই এলাকার আজগর আলী, আশকর আলী, গোলাম মাওলাসহ স্থানীয়রা জানান, প্রবাসী রাশেদুলের স্ত্রী খাদিজা মতিউর রহমানের বসতবাড়ি কিনে নিতে অপকৌশল করে আইয়ুব আলীর কাছ থেকে তার ভাতিজা রাশেদকে দিয়ে কিনে নিয়েছেন। অথচ ক্রেতা মতিউর এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
তারা আরও জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য নবী হোসেনের সহযোগিতায় বৃদ্ধ মতিউরকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। মতিউর একজন অসহায় ব্যক্তি। প্রথমে তার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকায় চুক্তি করে দলিলে পরিশোধ উল্লেখ করে মাত্র ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করে জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে ওই জমি প্রবাসী রাশেদের ভাতিজা রবিউলকে দিয়ে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায় একই জমি কিনিয়ে নেয় প্রবাসীর স্ত্রী খাদিজা।
এদিকে প্রবাসীর স্ত্রী খাদিজা নিজের ভাতিজাকে দিয়ে কৌশলে ওই ভিটেমাটি কিনে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মতিউরের কাছ থেকে আইয়ুব আলী ৬ লাখ টাকায় কিনেছেন। এরপর আমি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা আইয়ুব আলীকে দিয়ে তার কাছ থেকে একই জমি ভাতিজা রবিউলকে দিয়ে কিনিয়েছি। পরবর্তীতে রবিউল আমাদের নামে লিখে দেবে।
এ বিষয়ে আইয়ুব আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ইউপি সদস্য নবী হোসেন জানান, এখানে আমার কোন ভূমিকা নেই। তিনি জানান, আইয়ূব আলীর কাছে তারই চাচা আব্দুল কাদির ওই জমি নিজের বলে দাবী করেছিলেন। কিন্তু চেয়ারম্যান এ নিয়ে শালিসে বসলে উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে পারেননি। এসময় টাকা দিয়ে ওই জমি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে আইয়ুব আলীর কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভে ওই জমি কাদিরের ছেলে রবিউলের নামে লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে ওই জমি আইয়ুব আলীর কাছে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেন মতিউর। তবে ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।