মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্যে ঘুরছে দ্বারে দ্বারে! জীবন চলে টোকাইগিরি করে
প্রকাশিতঃ ৩:৩৫ অপরাহ্ণ | জুলাই ১৭, ২০১৮ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৮২৭ বার
ওমর ফারুক সুমন: ভাতার দাবীতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রমিজা খাতুন নামে একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। কখনো কাউকে বলছেন একটি দরখাস্ত লিখে দিতে, আবার কাউকে বলছেন ভাতার কার্ডটি করে দিতে। কখনো যাচ্ছেন চেয়ারম্যানের কাছে, কখনো যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। কেউ বলে পাগল, কেউ বলে দূরে যাও। কেউ বলে পরে এসো।এভাবেই ভাতার জন্যে ঘুরছেন রমিজা। রমিজার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা বাতেন ভাতার জন্যে দৌড়িয়েও পাননি ভাতা। কিছু অসাধু লোকের পাল্লায় পড়ে মৃত্যু হয় তার। পরে তার স্ত্রী চেষ্টা চালায় ভাতার জন্যে। ১০-১৫ বৎসর যাবৎ ভাতার জন্যে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও আজ পর্যন্ত তার ভাগ্যে জুটলোনা একটি ভাতার কার্ড।শেষপর্যন্ত টোকাইগিরির মতো একটি নিন্মমানের পেশাকে আঁকড়ে ধরে জীবন চলছে রমিজার। রমিজার সাথে কথা বলে জানা যায়, আট বৎসর পূর্বে রমিজার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী তারিখে মারা যান।বাতেন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ভাতা পাননি কখনো।বাতেনের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৪ আগষ্ট। সুত্রে জানা যায়, বাতেন ৩নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেক্টর কমান্ডার আতাউল গণি ওসমানী নিজেই বাতেনকে সনদপত্র প্রদান করেছেন।বাতেনের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পড়শিপাড়া গ্রামে। পরে বাতেন হালুয়াঘাট চলে আসেন এবং হালুয়াঘাট অবস্থানকালেই তিনি মারা যান। মারা গেলে তার একমাত্র স্ত্রী রমিজা হালুয়াঘাটের মনিকুড়া গ্রামে তার মেয়ে শিউলির আশ্রয়ে থাকেন। পরে অভাবের তাড়নায় ঢাকা গিয়ে টোকাইগিরি করে নিজের পেটের খাবার জোগাড় করেন। সোমবার রাস্তায় বোতল টুকানোর সময় রমিজার সাক্ষাৎ মিলে। কথা বলে জানা যায় বিচিত্র রকমের তথ্য। রমিজা বলেন, আমি আমার স্বামীর বৈধ কাগজপত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও গিয়েছি। একজনে কাগজপত্র জমা রাইখা আমাকে পাঠাইয়া দেই। ভাতা অইবো কই।পরে ভাতা আর অইলনা। এছাড়া আরও কত মুক্তিযোদ্ধা নেতাদের কাছে গিয়েছি। সকলে শুধু আশাই দেই। ভাতা আর অইনা। কি আর করমু। অবশেষে ঢাকার বিশ্বরোড চৌরাস্তায় বোতল টুকাইয়া খাই। পেটতো চালান লাগবো। স্বামী আমার আট বৎসর অসুখে পইরা আছিলো। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনাই। আমার ৫ ছেলে ২ মেয়ে। ৩ ছেলে আরও মারা গেছে। ১৫ জন নাতী পুতিও আছে। কেডা কারে দেহে। সবারই অভাব। জানা যায়, হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া আসনের সাংসদ জনাব জুয়েল আরেং এমপি তিনি নিজেও গত ২ জুলাই তারিখে রমিজার ভাতার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত সুপারিশ করেছেন। রমিজার ভাতার বিষয়ে হালুয়াঘাট সমাজসেবা অফিসার মাহফুজ ইবনে আইয়্যুব বলেন, রমিজার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলো এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তার নামে কোন গেজেট প্রকাশিত না হয়াই ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বলেন এই ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, রমিজার সাথে কথা হয়েছে। তাকে বলেছি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করতে। গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তি হলেই কেবল ভাতার ব্যবস্থা করা সম্ভব। ###