মাফিয়া ডন পাপিয়া! সকল অপকর্ম ফাঁস!
প্রকাশিতঃ ১২:১১ পূর্বাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৪৭৯ বার
ওমর ফারুক সুমনঃ পুরো নাম শামীমা নূর পাপিয়া। ডাক নাম পিউ। আজকে সবচেয়ে আলোচিত নাম।এমন কোনো অপরাধ নেই যা তিনি করতেননা। রাজনীতির আড়ালে মাদক ও নারী বাণিজ্য ছিলো তার। রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে আয়োজন করতেন পার্টির। আর সেখানে সাপ্লাই দিতেন নারী। এসকর্ট সার্ভিস। সুন্দরী তরুণীদের চাকরি দেয়ার নামে নরসিংদী থেকে ঢাকায় নিয়ে আসতেন। তারপর তাদের জিম্মি করে দিনের পর দিন করাতেন দেহ ব্যবসা।
গত শনিবার সকালে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় শাহজালাল বিমানবন্দরে র্যােবের জালে ধরা পরার পর বের হয়ে আসছে অপরাধ সাম্রাজ্যের গড মাদার পাপিয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য। দীর্ঘদিন ধরে দেহব্যবসা, অস্ত্র-মাদক ব্যবসা করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন এই নারী। ক্ষমতার শীর্ষে না থেকেও দাপট দেখিয়েছেন যিনি। মনোরঞ্জণ করে মন যুগিয়েছেন ওপরওয়ালাদের। আবার তাদেরই ব্লাকমেইলিং করে ফাঁদে ফেলেছেন। চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা।
বৈধ আয় অনুযায়ী পাপিয়ার বাৎসরিক আয় মাত্র ১৯ লাখ টাকা। অথচ হোটেল ওয়েস্টিনে শুধু গত তিন মাসেই বিল পরিশোধ করেছেন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যিনি নারী সংক্রান্ত অপকর্ম ছাড়াও অস্ত্র-মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন তদবির বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।।
পাপিয়া নরসিংদী জেলা মহিলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বামী মফিজুর রহমান সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন। এক সময় নরসিংদী জেলার ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। হত্যার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দলীয় পদপদবি, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠাবসা আর ব্লাকমেইলিং- এই তিনে মিলে অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন এই দম্পতি।
সমাজ সেবার আড়ালে অসহায় নারীদের দিয়ে দেহব্যবসা, গোপন ভিডিও ধারণ করে প্রভাবশালীদের ব্লাকমেইলিং, অস্ত্র-মদের ব্যবসা, জাল টাকা- এসব করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিলেন পাপিয়া। ঢাকায় রয়েছে অভিজাত ফ্ল্যাট। ফাইভস্টার হোটেল থেকে শুরু করে নিজ এলাকাতেও খুলেছিলেন দেহব্যবসালয়। তাদের অবৈধ এসব ব্যবসা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রসার লাভ করে।
পাপিয়া পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসা চালাতেন। এগুলোই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরা এর গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দেরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে তাদেরকে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করতেন পাপিয়া। গোপন ক্যামেরায় মেয়েদের ছবি ধারণ করে তাদের নিয়মিতভাবে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি। পাপিয়ার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়- পাপিয়া বসে আছেন বাইজিবাড়ির সর্দারনির মতো। তার হাতে মোটা একটি বেতের লাঠি। তার কব্জায় থাকা মেয়েরা কথা না শুনলে পেটাতেন এই নারী। পাপিয়া একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে।
যৌন বাণিজ্যসহ নানা অনৈতকর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার শামীমা নূর পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাকব।
তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যা ব। ইতিমধ্যে তার বাসা থেকে বিপুল পরিমান টাকা ও মদ উদ্ধার করা হয়েছে। জাল টাকা রাখার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিমানবন্দর থানায়। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাপিয়ার নানা অপকর্মের কাহিনী এরইমধ্যে বেরিয়ে পড়েছে।
রোববার সকালে রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে র্যািব।