ভিক্ষুক সালেমুন নেছা’র আজও হয়নি পুনর্বাসন
প্রকাশিতঃ ৯:১২ অপরাহ্ণ | জুলাই ১৮, ২০২১ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৪৯৩ বার

ওমর ফারুক সুমনঃ গত বছরের শুরুর দিকে। দিনটি ছিলো জুন মাসের চার তারিখ। চারিদিকে করোনা আতংক। লকডাউন চলছে। সকল মানুষ যখন করোনা ভাইরাসের চিন্তায় ব্যাস্ত, এমন সময়ে গত ২০২০ সালের ৪ জুন তারিখ সকালে হালুয়াঘাট বাজারে ভিক্ষা করতে আসেন সালেমুন নেছা নামে ৭২ বছর বয়সী এক নারী। তখন বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে বাজারের সব মানুষ দৌড়ে বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নেন। এ সময় বৃদ্ধা সালেমুন নেছা রাস্তার পাশে বসে বৃষ্টিতে ভিজছিলেন। আশপাশের লোকজন এমন দৃশ্য দেখে চোখের পানি ফেলেছেন। দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট কাদা-পানিতে একাকার হয়েছিল। ঘণ্টাব্যাপী রাস্তায় বসেছিলেন ওই বৃদ্ধা। এ অবস্থায় মুখটা কাপড় দিয়ে ডেকে ভিক্ষার থালার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন সালেমুন নেছা। তখন পর্যন্ত কেউ তাকে চিনতে পারেননি। সবার মুখে ছিল একই কথা, আহারে! কে এই বৃদ্ধা। প্রত্যক্ষদর্শী যারা তাদের বক্তব্য ছিলো- ঘরে খাবারের কতটা সঙ্কট থাকলে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তার ড্রেনের পাশে কাদা-মাটিতে ভিক্ষার জন্য বসেছিলেন এই বৃদ্ধা? সেই দিন একই তারিখে এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সুমন আহমেদ নামীয় একটি ফেইসবুক আইডিতে পোষ্ট দিলে অল্প সময়ের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শত শত শেয়ার আর কমেন্টসে আলোচনার ঝড় শুরু হয়। এমন দৃশ্য দেখে মানুষের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াই ফেইসবুকে যখন তুলকালাম শুরু হয় তখন ঘটনাটি নজরে আসে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিমের। তিনি উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে দ্রুত খোজ খবর নিতে নির্দেশ প্রদান করেন। অল্প সময়েই পরিচয় মেলে। তার বাড়ী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ৪নং সদর হালুয়াঘাট ইউনিয়নের পূর্ব গোবরাকুড়া (শাপলাবাজার) গ্রামে। ইউ.এন.ও রেজাউল করিমের হস্তক্ষেপে সালেমুন নেছাকে হালুয়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করানো হয়। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, কাপড় প্রদান করা হয়। খবরের কাগজেও আসে একের পর প্রতিবেদন। সালেমুন নেছাকে সরকারী ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও তার ভাগ্যে জুটেনি ঘর এমন বক্তব্য সালেমুন নেছার। রবিবার সালেমুন নেছার সাথে কথা বলে জানা যায় এমন তথ্য। তিনি বলেন, আমাকে আশা দিয়েও ঘর দিলোনা। এ জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেন বৃদ্ধা সালেমুন। এখনও ভিক্ষা করে চলছেন। ভিক্ষের টাকায় ওমর ফারুক নামে একজনের বাড়ীর এক কোনায় ছোট্ট একটি কুড়েঘর বানিয়ে সেখানেই রাত্রি যাপন করেন তিনি। জানা যায়, তার স্বামী হাফিজুর রহমান ১২ বছর আগে মারা যান। তখন থেকে সালেমুন নেছার জীবনযুদ্ধ শুরু হয়। কঠিন জীবনযুদ্ধে রূপ নেয়। এখন বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। তবুও প্রতিদিন রাস্তায় না নামলে তার পেটে খাবার জোটে না। এজন্য প্রতিদিনই তাকে ভিক্ষা করতে হয়। ভিক্ষুক সালেমুন নেছাকে পুনর্বাসন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পুনর্বাসনের দাবী জানান স্থানীয়রা। হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম বলেন, সালেমুন নেছার বিষয়টি মাথায় রয়েছে, তাকে কিভাবে পুনর্বাসন কিভাবে করা যায় এই ব্যবস্থা তিনি করবেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তার কেউ না থাকায় ঘর প্রদান করা যায়নি। তার পক্ষ থেকে কাউকে খোঁজেও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে সালেমুন নেছার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। ###