৪ লেন সড়ক নির্মাণে উন্মুক্ত হবে হালুয়াঘাটের দুটি স্থলবন্দরের উন্নয়নের দ্বার
প্রকাশিতঃ ৩:৫০ অপরাহ্ণ | জুন ০১, ২০১৮ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৫৯৬ বার
ওমর ফারুক সুমনঃ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার দুটি বন্দর তথা গোবড়াকুড়া-কড়ইতলি স্থলবন্দর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৪ লেনের সড়ক নির্মাণে উন্মুক্ত হবে দুটি বন্দরের উন্নয়নের দ্বার। একই সাথে সৃষ্টি হবে দুটি বন্দর থেকে শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের অপার সম্ভাবনা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্দর থেকে হালুয়াঘাট হয়ে যে সড়কটি আভ্যন্তরীন কয়লা ও অন্যান্য মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে তা একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন যে পরিমান কয়লার ট্রাকসহ বাস ও অন্যন্য যানবাহন চলাচল করে তাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পরিবহন মালিকদের। বন্দর থেকে হালুয়াঘাট প্রবেশ পথে একটি গাড়িই ঠিকমতো পারাপার করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া প্রতিবছর ডিসেম্বর -জুন পুরোদমে কয়লার মৌসুম। এ সময় প্রতিদিন ভারত থেকে শত শত টন কয়লা আমদানি করে থাকেন ১ হাজারেরও বেশি আমদানীকারক। তা এই অযোগ্য হয়ে পড়া সড়ক দিয়েই বাংলাদেশের আভ্যন্তরিক বাজারে জ্বালানী কাজে অর্থাৎ ইট ভাটা,কলকারখানা সহ ভিবিন্ন কাজে বিক্রি করে থাকেন। আর এই কাজের সাথে জড়িত একহাজারের অধিক লাইসেন্সকৃত আমদানিকারক। এছাড়া দুটি বন্দরে ১০ হাজারের অধিক শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ৪ লেনের সড়ক নির্মাণ হলে তাদের জীবিকার পথও আরও বেগবান হবে বলে সুধীমহলরা মনে করেন।
হালুয়াঘাট মোটর মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক জাফর আলী খান বলেন, প্রতিদিন কয়েকশত ট্রাক এ সড়ক দিয়ে কয়লা পরিবহনসহ অন্যান্য মালামাল আনা নেয়া করে থাকে। এছাড়া বহিরাগত প্রচুর গাড়ি কয়লার জন্যে আসে। এই সড়কটির যে অবস্থা তাতে একটি গাড়িই ঠিকমতো যেতে পারেনা। ৪ লেনের সড়ক নির্মাণ হলে বন্দরের উন্নয়ন তরান্বিত হবে বলে তিনি মনে করেন। কড়ইতলী কোল এন্ড কোক ইম্পোর্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব এম সুরুজ মিয়া বলেন, এ দুটি বন্দর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৪ লেনের সড়ক নির্মাণ সহ ইমিগ্রেশান চেক পোষ্ট, এমনকি অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কার্যাদি সমাপ্ত করে পুর্ণাঙ্গ বন্দরে রুপান্তরিত হলে সরকার প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। পাশাপাশি বহু লোকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। হালুয়াঘাট তথা গোটা দেশের অর্থনৈতিক যাত্রাকে তরান্বিত করবে। তিনি ৪ লেনের সড়ক নির্মাণের দাবী জানান। কড়ইতলি-গোবড়াকূরার এল সি স্টেশানের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, প্রতি বছরে দুটি বন্দর থেকে শুধুমাত্র কয়লা আমদানী করেই কোটি টাকার উপরে রাজস্ব আদায় করে থাকে। ৪ লেনের সড়ক নির্মাণসহ পূর্ণাঙ্গ বন্দর বাস্তবায়ন হলে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় সম্ভব বলে এই প্রতিবেদককে জানান। গোবড়াকুড়া আমদানী রপ্তানীকারক সমিতির সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব আলী আজগর বলেন, এখান দিয়ে মোট ১৭ টি পণ্যের আমদানির কথা থাকলেও শুধুমাত্র আমদানি হচ্ছে কয়লা ও পাথর। দুদেশের সরকারী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ব্যহত হচ্ছে বন্দরের পুর্ণাংগ কার্যক্রম। কেবলমাত্র পুর্ণাংগ স্থলবন্দরের বাস্তবায়নসহ ৪ লেনের সড়ক নির্মাণই এনে দিতে পারে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব আদায়। একই সাথে উন্মুক্ত হবে দুটি বন্দরের উন্নয়নের দ্বার।
জানা যায়, ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নৌ-পরিবরহন মন্ত্রী শাজাহান খান এম পি গোবড়াকুড়া -কড়ইতলি স্থলবন্দরকে পুর্ণাংগ স্থলবন্দর করার আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দিয়েছিলেন। ২০১২ সালের মার্চ মাসে প্রধান মন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর গওহর রিজভী গোবড়াকুড়া ও কড়ইতলি শুল্ক স্টেশন পরিদর্শন শেষে বলেছিলেন অচিরেই হালুয়াঘাট শুল্ক স্টেশানকে পুর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে উন্নীত করা হবে। এরপর থেকে সকলের প্রত্যাশা ছিল দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে আধুনিক মানের গোবড়াকুড়া-কড়ইতলি স্থলবন্দর। কিন্তু ঘোষনার প্রায় ৬ বৎসর অতিবাহিত হলেও শুরু হয়নি পুর্ণাঙ্গ কার্যক্রম। যার কারনে রাজস্বের অপার সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। দুটি বন্দর পুর্ণাঙ্গরোপ না পাওয়াই সরকার একদিকে হারাচ্ছে শত কোটি টাকার রাজস্ব আর অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান।