শিশু সন্তানকে হত্যা করে কুয়ায় নিক্ষেপ। মূল রহস্য উদঘাটন পুলিশের
প্রকাশিতঃ ৭:৪১ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ২,৩৪৫ বার
ওমর ফারুক সুমনঃ দুই বছরের কন্যা শিশু আয়েশা খাতুন। বরাবরের মতই ঘুমিয়ে ছিলেন পিতা মাতার কুলে। কিন্তু সেই পিতা মাতার হাতেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় আয়েশার। গত ১২ সেপ্টেম্বর সোমবার দিবাগত রাতে ঘুমন্ত শিশুকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ঘিলাভুই গ্রামের বাদশা মিয়া ও তার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন। হত্যার পর প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পূর্ব পরিকল্পনা মতে লাশ নিয়ে নিক্ষেপ করেন প্রতিবেশির পানি ভর্তি কুয়োর ভিতরে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় মঙ্গলবার সকালে কুয়ার ভিতর থেকে ভাসমান লাশ উদ্ধার করে হালুয়াঘাট থানা পুলিশ। উদ্ধারে নেতৃত্ব দেন হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুজ্জামান খান। পরে এ ঘটনায় শিশুটির দাদী অভিযুক্ত আসামী বাদশা মিয়ার মাতা জুবেদা খাতুন বাদী হয়ে নিজ সন্তান ও পুত্র বধূকে আসামী করে হালুয়াঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুজ্জামান খানের নেতৃত্বে এস আই আতাউর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযুক্ত পিতা বাদশা মিয়া ও মাতা আম্বিয়া খাতুনকে আটক করেন। বুধবার আদালতে দু’জনকে প্রেরণ করেন। আদালতে বিজ্ঞ বিচারকের সন্মুখে শিশু হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় বলে জানান হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাহিনুজ্জামান খান। মামলা, পুলিশ ও স্থানী সুত্রে জানা যায়, শিশুটি হত্যার আসল রহস্য। অভিযুক্ত ঘাতক আম্বিয়া খাতুন তার পিতার বাড়ীর আপন ভাইদের সাথে ওয়ারিশান জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বন্ধ চলে আসছিলো। সেই বিরোধের জের ধরেই আম্বিয়া তার ভাইদের ফাঁসাতে বাদশা মিয়া এবং তার স্ত্রী মিলে সাঁজায় হত্যার নাটক। নিজ সন্তানকে হত্যা করে কুয়াই নিক্ষেপের পর তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে স্ত্রী আম্বিয়ার হাত মুখ পা বেধে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন স্বামী বাদশা মিয়া। একই সাথে ঘরের এক পাশে খনন করেন সিঁধ। রাত গভীর হলে বাদশা মিয়া বাড়ীতে এসে ঘরে তালাবদ্ধ রয়েছে এমনটা জানিয়ে স্থানীয়দের জড়ো করেন। এক পর্যায়ে ঘরের তালা খুলে স্থানীয়রা দেখতে পান তার স্ত্রী আম্বিয়ার হাত মুখ বাঁধা। পুলিশ জানায়, শশুর বাড়ির লোকদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই এ নাটক সাজায়। স্থানীয়রা জানান, সিঁধ দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে শিশুটিকে কেউ হত্যা করতে পারে এমনটা বুঝাতেই এ নাটক সাঁজিয়েছেন। তবে সিঁধের আকার এতটুকুই বড় যে, তার ভিতর দিয়ে মানুষ প্রবেশ করা যাবেনা এমন মন্তব্য প্রতিবেশীদের। এদিকে এত নাটক করার পরেও শেষ রক্ষা হলোনা ঘাতক পিতা মাতার। পুলিশের অভিযানে ঘটনার ১২ ঘন্টার মধ্যেই মূল রহস্য উদঘাটন করে ফেলে পুলিশ। হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুজ্জামান খান শিশু হত্যার প্রাথমিক সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ঘটনায় জড়িত পিতা -মাতাকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর বিধায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে জড়িত পিতা-মাতাকে আটক করার পর আসামীরা তাদের অপরাধের কথা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকার করেছেন।