এ কোন্ সকাল—পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায় (কলকাতা)
প্রকাশিতঃ ৯:২৩ অপরাহ্ণ | জুন ০৭, ২০১৮ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৪৯১ বার
বেসামাল হয়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিলাম।
মায়ের ইউ. এস. জি রিপোর্টে সিরোসিস অব্ লিভার !
মনের আকাশে কালো মেঘ জমে উঠেছিল মুহূর্তে
রক্তে রক্তে সর্বনাশের দুন্দুভি !
চোখের কোনায় চিকচিক করে উঠছিল
সব হারাবার যন্ত্রণা ।
পায়ের তলার মাটি ঝিরঝির !
ভিতর থেকে মায়ের নাম ডাকল
……বিজয়া গাঙ্গুলী …………বিজয়া গাঙ্গুলী
পূর্ণিমার চাঁদের মতো মুখ নিয়ে ডাক্তার বাবুর সামনে দাঁড়াতেই ডঃ অরূপ গুছাইত একমুখ হেসে
মায়ের সঙ্গে কথা বলতেই………
ছলছল ঝরণার মতো উচ্ছসিত মায়ের
মুখে যেন জ্যোৎস্নার খিলখিলানি
সন্তান সুখ ! এক অপার নির্ভরতা!
রোগ সারবার বিশ্বাস !
এ দৃশ্য আমি বারবার দেখেছি ••••মা ও সন্তানের মিলন !
যেন রোগ দেখাতে নয় ••••মা এসেছে ছেলের বাড়ি !
নার্সিংহোম!
মায়ের গলায় গুনগুন গীতবিতান …জগন্ময় মিত্র
গলায় নলের খোঁচায় যেন মণিমুক্তো বিহীন।
মনখারাপের আলোয় মা নিজেকে ভাবে হলুদ পাখি
অন্ধেরও জীবনে আলো আছে মাগো………
এক আকাশ খুশী নিয়ে মা গান শুনতে থাকে
একটার পর একটা ………
আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়, তুমি যে বহ্নিশিখা ……
সাতটি বছর পরে ………
কতদিন দেখিনি তোমায় ……
মায়ের অনন্ত আশীর্বাদে আমার দুই চোখ
চিকচিক করে, নাকের পাটা চিনচিন
দুইহাতের আড়াল দিয়ে প্রদীপে ঢালছি তেল
এবেলা ওবেলা সেবেলা পুষ্টিকর যা কিছু বারেবারে
শিশুর মতো বকি, ভোলাই ……
ঐ দ্যাখো রূপবতী তারারা টিপটিপ
ঐ দ্যাখো চাঁদ গদগদ
খাও মা খাও মা ………
মাঝে মাঝে প্রদীপের শিখা ফুঁসে ওঠে
খাইয়ে কি মেরে ফেলবি? কত খাব?
মাকে শোনাই আমার চোখের কুয়াশাকথা
দুধে তিনটে রুটি চটকালে
মাকে বলি একটা রুটি মাত্র
না খেলে লিভার শক্তিশালী হবে কি করে?
মা চাঁছিপুছি খেয়ে নিলে
গাল টিপে আদর মাখাই
এই তো কেমন ভালো মেয়ে
লক্ষী সোনা মা আমার
•••••••••••
মাকে আরো আয়ু দাও ভগবান
মাকে আরো আরো আরো দাও প্রাণ
•••••••••••
ওষুধ পথ্যি আর ভালবাসার অবিশ্রান্ত যত্নে
আমার সদ্য বাবা হারা বিধবা মায়ের মুখে
জমে ওঠা দীর্ঘ পথের ক্লান্তি জরা বলিরেখা
সব যেন ঝলমলে রোদ্দুর হয়ে উঠছিল
•••••••••••
স্মৃতিকথার আসর সাজাত মা
তার রূপকথাময় ছেলেবেলার বান্ধবীর গল্প
ঝিকিমিকি জোনাকির ঝাঁকে লুকোচুরি খেলার গল্প
এমনই এক পূর্ণিমা সন্ধ্যায়••••••স্বচ্ছ নদীর জলে
একটা আস্ত চাঁদ ডুব মারলে তিন তালির যাদুতে
সোনামুখী নৌকো ভেসে ওঠার কাহিনী
গল্প শুনতে শুনতে অপার বিস্ময়ে
মায়ের মুখ দেখতে দেখতে ডুব দিয়েছি
কখন ঘুমের গভীরে টের পাইনি
•••••••••••
মা দেখেছিল পরিশ্রান্ত ক্লান্ত মেয়েটির মুখ
আহা মায়াবতী ঘুমোক, ঘুমোক
••••••••••••
কেন মা আমাকে ডাকল না ! এর নাম কি নিয়তি !
মরণ ঘুম ভাঙল তখন সর্বনাশের সকাল !
পড়ে গিয়ে মায়ের হাত ভেঙেছিল ।
তারপরের সাতদিন মায়ের জীবনের
বিভীষিকাময় পরিসমাপ্তি!