দুটি নলকুপ অকেজু করে দিল দুর্বৃত্ত ,সেচ সংকটে কয়েক শতাধিক কৃষক
প্রকাশিতঃ ৯:৩৯ অপরাহ্ণ | জানুয়ারি ০৫, ২০২৪ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৪৪ বার
মোঃ দৌলত হোসেন নালিতাবাড়ী:
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় রাতের আধারে দুর্বৃত্তরা ব্যক্তিগতমালিকাধীন দুটি গভির নলক’প অকেজু করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে উপজেলার তিনটি গ্রামের তিনশতাধিক কৃষকের ১৫০ একর জমি সেচ সংকটের আশঙ্কায় পড়েছে।এই কৃষকরা দ্রুত সেচ সংকট নিরসন ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবী জানিয়েছেন । গত বোরবার রাতে কুতুবাকুড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
গত মঙ্গলবার রাতে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সেচপাম্প মালিকের পক্ষ থেকে নালিতাবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রতিনিধি, সেচমালিক ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের কুতুবাকুড়া ও কয়রাকুড়ি গ্রামের ২০১০ সালে ওই গ্রামের শাহের আলী ৫০ লাখ ব্যায়ে দুটি গভির নলক’প স্থাপন করেন। এতে কুতুবাকুড়া,কয়ড়াকুড়ি ও অভয়পুর গ্রামের তিনশতাধিক কৃষকের ১৫০ একর জমিতে সেচ দিয়ে আসছিলেন। এখন কৃষকরা তাঁদের খেতে সেচ দিয়ে বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিবেন। কিন্ত গত রোববার ভোরে দুর্বৃত্তরা দুটি নলক’পের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় মিটার বোর্ড ভেঙে মিটার খোলে নিয়ে যায় এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলে। সেচ পাম্পের ঝালাই কাটিয়া পাম্পের মোটর ৮০ ফুট নিচে ফেলে দেয়। এছাড়া মটারটি অকেজু করতে সেচপাম্পের পাইপের মাঝে সিমেন্ট ও পাথর ফেলা হয়। গত রোববার সকালে ওই গ্রামের কৃষকরা সেচ পাম্পের ঘরে তালা ভাঙা দেখতে পেয়ে শাহের আলীকে খবর দেওয়া হয়। পরে সাহের আলীর স্ত্রী সুলতানা পারভীন গ্রামবাসীকে নিয়ে এসে এই ঘটনা দেখতে পান। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত মঙ্গলবার সুলতানা পারভীন বাদি হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তিন গ্রামে একাধিক কৃষক জানান, কুতুবাকুড়া ও কয়রাকুড়ি বন্ধে একমাত্র শাহের আলীর দুটি গভীর নলক’পের মাধ্যমে ১৫০ একর জমিতে তাঁরা আমন ও বোরো মৌসুমে সেচ ব্যবহার করে থাকেন। এখন বোরো ধান আবাদ করতে খেতে সেচ প্রয়োজন কিন্ত শাহের আলীর সাথে শত্রুতা করে রাতের আধারে দুর্বৃত্তরা দুটি লনক’পি নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে তিন গ্রামের তিনশতাধিক কৃষক বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাঁরা দুর্বৃত্তদের চিহ্ণিত করে দ্রুত শাস্তি ও সেচ কাজ দ্রুত সচল করার দাবী জানান।
গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিনে কতুবাকুড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে তিন গ্রামের প্রায় দেড়শতাধিক কৃষক গভীর নলক’পের কাছে জড়ো হয়েছেন। তাঁরা দেখান দুটি সেচপাম্পের ঘরের দরজা ভেঙে মিটার বোর্ড ভেঙে ফেলা হয়েছে।এছাড়া সেচপাম্পের লোহার পাইপ কেটে মটার পাইপের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। অকেজু করতে পাইপের মধ্যে সিমেন্ট ও পাথর ফেলা হয়েছে। এসময় সেচপাম্পের কাছে দুটি খালি সিমেন্টর বস্তা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসময় কৃষকরা সেচপাম্প দুটি অকেজু করে দেওয়া প্রতিবাদ ও দুর্বৃত্তদের শাস্তির দাবী জানান।
কুতুবাকুড়া গ্রামের আফসর আলী বলেন,এই সেচপাম্পের মাধ্যমে আমি দুই একর জমিতে বোরো ও আমন ধান চাষ করে থাকি। এই ধানেই পরিবারের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সারা বছর আমার সংসার চলে।এখন বোরো ধান আবাদ করুনের লাইগা জমি প্রস্তুত করতে পানির দরকার। কিন্ত শত্রুতার কারণে দুটি সেচপাম্প নষ্ট কইরা ফালাইছে। অহন তো আমারমত প্রায় তিন শতাধিক গরীব কৃষক দুশ্চিন্তায় পড়ছে।আমরা দ্রুত সেচ কাজ চালু করার দাবী জানাই। সেই সাথে দুর্বৃত্তগর উপযোক্ত শাস্তির দাবী করি।
সেচপাম্পের মালিক শাহের আলীর স্ত্রী সুলতানা পারভিন বলেন, গত নভেম্বর মাসে শাহের আলীকে তার সৎ ভাইয়েরা বেদরক মারপিট করে দুটি পা ভেঙে দিয়েছে। তাঁর স্বামী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ নিয়ে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই মামলার কারণে এবং তাঁর স্বামীকে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে রাতের আধারে দুটি সেচপাম্প নষ্ট করে দিতে এই কাজ করা হয়েছে। তাঁর প্রমাণও আছে। আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।নন্নী ইউনিয়ন পরিষদের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রোকসানা বেগম বলেন,দুটি সেচপাম্প অকেজু করায় শতশত কৃষকদের বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির দাবী করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মো.আবদুল ওয়াদুদ বলেন,সেচকাজ বন্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই। যারাই এ কাজ করেছেন তারা অন্যায় করেছেন। ব্যক্তি আক্রশে কৃষকদের ক্ষতিকরা যাবে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা সেচকাজ পরিচালনার দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।