মানুষ মানুষের জন্য, একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা?
প্রকাশিতঃ ৬:৪০ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৭৬২ বার
ওমর ফারুক সুমন, হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) থেকেঃ
মানুষের বিপদের সময় পাশে থেকে সহযোগিতা করাই মানুষের ধর্ম হওয়া উচিত। একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে যদি একটি প্রাণ বাঁচে; একজন মানুষ বাঁচার স্বপ্ন দেখে—তাতেই হয়তো জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
বিভিন্ন সময় মানুষের জীবনে অভাব নামক দুর্যোগ এসে হানা দেয়। তখন আমাদের সমাজের কিছু মানুষ বিপদ সঙ্কুল পরিবেশে পতিত হয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। ঠিক তখনি প্রয়োজন তাদের সহযোগিতার। আমাদের সমাজে অনেকের নিরাপদ আশ্রয়টাই অপ্রতুল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের মাথা গোজার ঠাঁই হচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকার নানাভাবে এ সকল অভাবগ্রস্থ মানুষদের খাবার-পানি-বাসস্থানের ব্যবস্থা করলেও এই সহযোগিতা সবাই পাচ্ছে না। এ অবস্থায় এদের পাশে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এগিয়ে আসা অতীব জরুরি এবং মানবিক।
একজন মানুষ, মানুষের জন্যই। বিপদে-আপদে, সমস্যা-সংকটে ছুটে এসে সাহায্য করবে—এমন প্রত্যাশা মানুষ মাত্রই করতে পারে। মানব জীবনের সম্পূর্ণতা আর তৃপ্তির জন্য সমাজের অসহায়-পীড়িতদের জন্য কিছু করা দরকার। আমাদের সবারই সুযোগ রয়েছে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার।
ছবিতে হালুয়াঘাট উপজেলায় অবস্থিত ১০টি পরিবারের কথা বলা হয়েছে। যারা নিতান্তই গরীব ও অসহায়। কারও বয়স একশ ছুঁই ছুঁই হলেও তাদের ভাগ্যে জুটেনি এখনো বয়স্ক ভাতার কার্ড! প্রতিবন্ধী হয়েও পাচ্ছেনা ভাতা! ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ধারাবাহিকভাবে ১০ টি পরিবারের সচিত্র চিত্র তুলে ধরা হলো। ১। নুরজাহান বিবি (৯৬), দর্শারপাড় বাজার সংলগ্ন। কোন ছেলে সন্তান জীবিত নেই। দুই সন্তান ছিলো, তারা অসুখে মারা যায়। বয়স ৯৬ বছর হলেও পাননি বয়স্ক ভাতা! ২। রমিজা খাতুন, ঠিকানাঃ মনিকুড়া, স্বামী মুক্তিযোদ্ধা থাকা সত্ত্বেও কপালে জুটেনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা! ৩। ছোটদাস পাড়া গ্রামের বাইট্টা জলিলের পরিবারের আট প্রতিবন্ধী, দুজন প্রতিবন্ধী ভাতা পায়, বাকীদের জীবন চলে কষ্টে। ৪। দর্শারপাড় গ্রামের আফজান বিব(৭৫), ইউএনও ও সমাজ সেবা অফিসের হস্তক্ষেপে ভাতার কার্ড হলেও অসহায়ত্ব জীবন যাপন করে। যার গত রমজান মাসে শুধু মিঠাই দিয়ে সেহরি খাওয়ার সংবাদ প্রকাশ হলে সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরে কেউ কেউ এগিয়ে এসে তার জন্যে একটি ঘর, টিউব ওয়েল ও লেট্রিনের ব্যবস্থা করেন। কেউ আবার ঈদুল আযহার সময় একটি খাঁসীও কুরবানী করে দেন আফজানের জন্যে।৫। আব্দুল মজিদ (৯২), ঠিকানাঃ রনকুঠরা গুচ্ছ গ্রামে, পেশায় ভিক্ষুক। একটি ভাতার কার্ড হয়নি তার। ৬।রনকুঠরা গুচ্ছ গ্রামের সূর্যবানু (৯৮), বয়স ৯৮ বছর হলেও সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কেউ। হয়নি বয়স্ক ভাতার কার্ড! কোন পুত্র সন্তান নেই সূর্যবানুর। ৭। মনিকুড়া গ্রামের অন্ধ প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক তরিকুলের পরিবার। ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা করে জীবন চালাতে হয় তার। ৮। বাহিরশিমুল গ্রামের সাবজান বিবি (৯৬), এই বয়সেও ভিক্ষা করেন। একটি ভাতার কার্ড হলেও জীবন কাটে খুবই কষ্টের। ৯। হাইসু সেক (৯৬), এই বয়সেও অভাবের তাড়নায় ঠেঁলাগাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ভাতার কার্ড হয়নি হাইছুর। ১০। মনিকুড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী তিন সন্তানসহ প্যারালাইসিস রোগী মুর্শিদ (৫৫), জায়গা জমি নেই। একজন ভাতা প্রাপ্ত। এ রকমভাবে সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অভাবগ্রস্থ মানুষ! যারা নিতান্তই অসহায়! আমি, আপনি, সে এভাবেই এগিয়ে আসতে পারি সকলেই। দাঁড়াতে পারি বিপদে মানুষের পাশে। আসুন এ সকল অসহায় মানুষদের পাশে এসে একটু সাহায্যের হাত প্রসারিত করি—ভুপেন হাজারিকার সেই অমর গানের মতোই…মানুষ মানুষের জন্য/জীবন জীবনের জন্য/একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না/ও বন্ধু/মানুষ মানুষকে পণ্য করে/মানুষ মানুষকে জীবিকা করে/পুরনো ইতিহাস ফিরে এলে লজ্জা কি তুমি পাবে না?/ও বন্ধু/বল কী তোমার ক্ষতি/জীবনের অথৈ নদী/পার হয় তোমাকে ধরে দুর্বল মানুষ যদি/মানুষ যদি সে না হয় মানুষ/দানব কখনো হয় না মানুষ/যদি দানব কখনো বা হয় মানুষ লজ্জা কি তুমি পাবে না?…