দেশে জীবিত ৪১টি ভাষার মধ্যে ১৪টি ভাষা বিপন্ন প্রায়
প্রকাশিতঃ ৪:৪৯ অপরাহ্ণ | মে ০৮, ২০২২ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ২১৫ বার
ওমর ফারুক সুমন: ভাষা মানুষের বুদ্ধিমত্তা অর্জন, ধারন ও বিস্তারনের প্রধান মাধ্যম হলেও একের পর এক ভাষার জন্ম আর মৃত্যু ঘটেই চলছে। ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে বর্তমানে বিশ্বে সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশী ভাষা রয়েছে যাদের অর্ধেক এই চলতি শতকেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের বাস্তবতাও ভিন্ন নয়। সর্বশেষ জরীপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বাংলাসহ একচল্লিশটি ভাষা জীবিত থাকলেও অনেকগুলো ভাষাই আজ বিলুপ্ত প্রায়। শনিবার ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা কনফারেন্স হলরুমে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর আয়োজনে বিভিন্ন ভাষাভাষীর নৃ-গোষ্ঠী নেতাদের সাথে মত বিনীময়কালে জানা যায় এ তথ্য। বিসিসি’র গবেষক ও লেখক পাবেল পার্থ বলেন, বাংলাদেশের সাংবিধানিক রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলা ভাষাভাষী বাঙ্গালীর পাশাপাশি এই ভূখন্ডে আরও অর্ধশত ভাষা ও ভাষাজাতি রয়েছে, যাদের অনেক ভাষায় আজ বিপন্ন প্রায়। সম্প্রতি ড্রিম-৭১ নামে একটি সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে, সর্বশেষ নৃতাত্ত্বিক জরিপে ১৪টি ভাষা আজ বিপন্ন। ভাষাগুলো হচ্ছে কন্দ, খারিয়া, কোডা, সাওরিয়া, মুন্ডা, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, লুসাই, লালেং। এদের মধ্যে রেংমিটচার মতো এমন ভাষাও রয়েছে যাদের মধ্যে মাত্র ৬ জন ব্যবহারিক জীবিত রয়েছে। ২৬টি ভাষা রয়েছে যাদের বিভিন্ন লিপিতে ব্যহৃত হয়। লিখিত রুপ থাকা ভাষা গুলোর মধ্যে বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করে চারটি এবং ৮টি ভাষা নিজস্ব লিপি ব্যবহার করে। ১৪টি ভাষা রোমান লিপি ব্যবহার করলেও এখনো আরও ১৪টি ভাষা রয়েছে যাদের কোনো লিখিত রুপ-ই নেই। এ অবস্থায় ভাষা গুলো যাতে হারিয়ে না যায়, যুগ যুগ ধরে পরবর্তী প্রজন্মের লোকেরাও জানতে পারে সে জন্যে তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের অধীনে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বিসিসি। এর মধ্য দিয়ে যে ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরী করা হবে সেখানে প্রতিটি ভাষার প্রতিনিধিত্ব থাকবে । ৪০ ভাষার অন্তত ১২০০০ মিনিট স্পিচের আইপিএ উচ্চারনসহ অনুবাদ, প্রতিটি ভাষার জন্য সংক্ষিপ্ত ত্রৈভাষিক শব্দকোষ, নিজস্ব লিপি থাকা ভাষাগুলোর জন্য ইউনিভার্সেল কিবোর্ড, ফন্ট, ফনোলজিক্যাল চার্ট এবং নৃগোষ্ঠীদের মৌখিক সাহিত্যের একটি সুবিন্যস্ত সংগ্রহশালা তৈরী হবে। এর ফলে বিপন্ন ভাষাগুলোর ডিজিটাল আর্কাইভিং এর পাশাপাশি নৃতাত্বিক ভাষাভাষী মানুষেরা কিবোর্ডে নিজ মাতৃভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল জগতে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারবেন । এই কম্পোনেনটির বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি সংস্থা। মত বিনীময় সভায় বিশটির অধিক ভাষাভাষীর নৃ-গোষ্ঠী নেতারা অংশ নেয়। নিজের মায়ের ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে এবং স্বীকৃতি পেতে জোর দাবী জানানো হয় নৃ-গোষ্ঠী নেতাদের পক্ষ থেকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সোহেল রানা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিসিসি’র নির্বাহী পরিচালক ডক্টর মোঃ আব্দুল মান্নান।