নালিতাবাড়ীতে চুরির অভিযোগে কিশোর নির্যাতন
প্রকাশিতঃ ৬:৪০ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ১০৬ বার

নালিতাবাড়ী সংবাদদাতা: শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে।
টাকা চুরির অভিযোগ এনে প্রথমে কিশোর ছেলেকে পেছনে হাত বেঁধে মারধর করে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের পর দিনমজুর বাবাকে ধরে এনে মারধর। একপর্যায়ে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দিনমজুর চাচাকে ডেকে নিয়ে জমির চুক্তিনামা আদায় করে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
গত বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের ভটপুর-সিধুলি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, গত ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার বেলা আনুমানিক এগারোটার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকায় ভটপুর গ্রামে জমি বন্ধকি বাবদ প্রাপ্ত কৃষক আমিনুল ইসলামের এক লাখ ২৬ হাজার ৫শ টাকা স্টিলের সোকেশ থেকে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তারা প্রতিবেশি দিনমজুর চাঁন মিয়ার কিশোর ছেলে মোশারফ (১৭) কে সন্দেহ করে এবং পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমানকে জানায়। একপর্যায়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুরের দিকে কিশোর মোশারফকে ধরে নিয়ে পাশের সিধূলী গ্রামে জয়নাল আবদীনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর ইউপি সদস্য হাবিবুর ও অন্যরা মোশারফের দুই হাত পেছনে টেনে ঘরের বারান্দার খামের সাথে বেঁধে মারধর শুরু করে। মারধরের একপর্যায়ে টাকা চুরির কথা স্বীকার করিয়ে তা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর ইউপি সদস্য হাবিবুর পাশের আরেক ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাম্মেলকে ডেকে নিয়ে যান। পরে কিশোরের পিতা দিনমজুর চাঁন মিয়াকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তাকেও পেটান ইউপি সদস্য মোজাম্মেল। এরপর পিতা-পুত্রকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দিনমজুর চাচা লাল মিয়াকেও ডেকে নেওয়া হয় ওই বাড়িতে। সেখানে নিয়ে ভাই-ভাতিজাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চুরি যাওয়া টাকা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। এসময় বাধ্য হয়ে সম্প্রতি দুই লাখ টাকায় চুক্তিনামা করে কেনা জমির গ্রাম্য দলিল ইউপি সদস্যদের হাতে জিম্মা রেখে ভাই-ভাতিজাকে উদ্ধার করে বাড়ি ফেরেন লাল মিয়া।
চুরি যাওয়া টাকার মালিক আমিনুলের স্ত্রী অঞ্জনা জানান, আমি দরজায় শিকল দিয়ে বাড়ির বাইরে গেলে শোকেসের ড্রয়ারে রাখা এক লাখ ২৬ হাজার ৫শ টাকা চুরি হয়। এলাকায় ছোটখাটো সব চুরি মোশারফ করে থাকে। তাই আমাদের সন্দেহ হয় এ টাকা মোশারফই নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে তাদের কোন সাক্ষী-প্রমাণ নেই বলে জানান অঞ্জনা ও বাড়ির লোকজন।
ভুক্তভোগী মোশারফ, বাবা চাঁন মিয়া ও চাচা লাল মিয়া জানান, বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে বেঁধে মারধর করে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করে ভিডিও করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জমি চুক্তির দলিলটিও আটকে রাখা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এলাকাবাসী জানান, হাতেনাতে না ধরে এবং কোনপ্রকার সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই এভাবে চুৃরির অভিযোগ তুলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। কোন ইউপি সদস্য এমন করতে পারেন না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবর রহমান জানান, আমার ওয়ার্ডে ঘটনা অথচ আমি কিছুই জানি না। আমার কাছে কেউ অভিযোগও করেনি। আমার ওয়ার্ডের বাইরে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ওই ইউপি সদস্যরা আমাকে ফোনে যেতে বলেন। কিন্তু আমি অন্য একটি শালিসে উপজেলায় ব্যস্ত থাকায় উপস্থিত হতে পারিনি। তিনি বলেন, কোন ইউপি সদস্য এভাবে অনুমান নির্ভর হয়ে সন্দেহজনকভাবে কাউকে ধরে নিয়ে মারধর করতে পারেন না। এটি আমাদের এখতিয়ারে নেই।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য হাবিবুর ও মোজাম্মেল জানান, আমরা মোশারফকে ধরে নিয়ে বাঁধিনি, মারধরও করিনি। এলাকাবাসী এমন করেছেন। তবে ইউপি সদস্য মোজাম্মেল কিশোরের বাবা চাঁন মিয়াকে মারধরের কথা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান, ঘটনা শোনার পর সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।