সীমান্তে হাতির আক্রমণ থামছেইনা
প্রকাশিতঃ ৭:১১ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৪২৬ বার

ওমর ফারুক সুমন, হালুয়াঘাটঃ নিজের ধান ক্ষেত রক্ষা করতে গিয়ে হাতির আক্রমণের শিকার হন নওশের আলী (৬০) নামে এক কৃষক। নিহত নওশের আলীর বাড়ী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কড়ইতলী কোচপাড়া গ্রামে। শুক্রবার ভোররাতে সীমান্ত এলাকার ১১২২ নং মেইন পিলার হতে আনুমানিক ২০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কৃষক নওশের আলী হাতি তাড়াতে গিয়ে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যান। নিহত নওশের আলীর কন্যা বলেন, রাতে হঠাৎ শতাধিক হাতির পাল ধান ক্ষেতে নামে। নিজ ক্ষেতের ধান রক্ষা করতে স্থানীয়দের সাথে হাতি তাড়াতে গিয়ে মৃত্যু হয় তার পিতা নওশের আলীর। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হাতির পালের মধ্যে একটি বড় হাতি হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে নওশের আলীর দিকে তেড়ে আসে। এতে অন্যান্যরা দৌড়ে পালাতে পারলেও বয়সের ভারে সে দৌড়ে পালেতে ব্যার্থ হয়। ঘটনাস্থলেই হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে ছটফট করতে থাকে কৃষক নওশের। হাতি সরে গেলে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে স্বজনরা। এ অবস্থায় নিজ কন্যার কাছে পানি খেতে চান মৃত্যু পথ যাত্রী নওশের। কন্যার হাতে পানি খাওয়ার সাথে সাথেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সীমান্ত এলাকার শত শত ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতি বৎসর ধান আর কাঠালের মৌসুমে ভারতীয় হাতির তান্ডবে ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকায় বিরাজ করে সীমাহীন হাতি আতংক। শত বছর যাবত শতাধিক হাতির দল ভারতীয় কাটা তারের বেড়া অতিক্রম করে ফসলের ক্ষতিসাধন করে যাচ্ছে। হাতির থাবায় পিষ্ট হয়ে হারাচ্ছে একের পর এক তাজা প্রাণ। গত কয়েক বছর যাবৎ হাতির আক্রমণ বেশী হচ্ছে। বছরের অধিকাংশ সময়ই বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থান করে হাতির পাল। সীমান্তের বাসিন্দাদের কাছে বর্তমানে প্রতিটি রাত মানেই অজানা হাতি আতঙ্ক। প্রতিটি রাত মানেই উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চিয়তাযর মধ্য দিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় ময়মনসিংহের এইসব পাহাড়ি বাসিন্দাদের। জানা যায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যর পাহাড় থেকে নেমে আসে শতাধিক বন্য হাতির দল। মাঝে মধ্যেই তাণ্ডব চালায় স্থানীয় বসতবাড়িসহ কৃষিক্ষেতে। কোন উপায়েই রোধ করা যাচ্ছে না হাতির এমন তান্ডব। শত বছর ধরে হাতির আক্রমনে প্রাণ হারিয়ে যাচ্ছে একের পর মানুষ। ধ্বংস করে যাচ্ছে ঘরবাড়ী, আবাদি জমি আর ফসলের মাঠ। স্থানীয় বানাইচিরিঙ্গিপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী শামসুল হক (৫৫) জানান, প্রতি বছর ধান এবং কাঠালের এই মৌসুমেই হাতির আক্রামন বেশি হয়। হাতির পাল শুধু বসত বাড়িতেই হামলা করে না। কখন কখনো ধংস করে দেয় বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ। গত পঞ্চাশ বছরে আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় হাতির থাবায় প্রাণ হারিয়েছে অর্ধশতাধিকের বেশি মানুষ। তবে জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোন সহযোগীতা না পাওয়ায় অনেকেই আবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন। ময়মনসিংহ বনবিভাগের গোপালপুর বিট অফিসার মাজহারুল ইসলাম বলেন, হাতির আক্রমণ রোধ করা সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সম্ভব নয়। যেহেতু হাতি মারা নিষিদ্ধ তাই মারারও বিধান নেই। তাই এদের কাছ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করেই মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতীয় কাটাতারের বেড়া অতিক্রম করে মূলত খাদ্যের সন্ধানেই এরা বাংলাদেশে আসে। তাই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এদেরকে মোকাবেলা করতে হবে বলে মন্তব্য বনবিভাগের এই কর্মকর্তার। ###