হালুয়াঘাটে প্রতারিত শত শত কৃষক
প্রকাশিতঃ ৫:৫০ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৮৪০ বার
ওমর ফারুক সুমন: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিবিদ সীডস কোম্পানীর উচ্চ ফলনশীন ব্রি-৩২ জাতের ধান বীজের প্যাকেট ক্রয় করে প্রতারনার শিকার হয়েছেন শত শত কৃষক এমন অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরা বাদী হয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সরেজমিনে সোমবার উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে ভুক্তভোগী কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা এমন অভিযোগ করেন। জানা যায়, ২ কেজি ওজনের ধান বীজের প্যাকেটের মোড়কের উপরে আসল মোড়কের স্থলে নকল মোড়ক আর লোগো ব্যবহার করে কৃষকদের মাঝে ধান বীজ বিক্রি করেন স্থানীয় কতিপয় বীজ বিক্রেতা। আর এই নকল বীজ ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হন কয়েক শতাধিক কৃষক। কৃষকরা জানান, প্যাকেটের গায়ে কৃষিবিদ সিডস কোম্পানীর লোগো ও নির্ধারিত বীজের নাম থাকলেও মূলত প্যাকেটের ভিতরে রয়েছে অন্য জাতের বীজ। আর এই বীজ স্থানীয় দোকান থেকে কৃষকরা ক্রয় করে কৃষি জমিতে রোপন করলে কোনরকম ফলন পাননি। রোপনের এক মাসের মাথায় ধান গাছে অল্প অল্প কুশি চলে আসে। কিছু ধান পেকে যায়, আবার কিছু কুশি বের হওয়ার অপেক্ষায়। ধান গাছের উচ্চতাও একেবারে কম। ফলন নেই বললেই চলে। হালুয়াঘাট উপজেলার আমতৈল গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক শহদেব (৩৫), মিজানুর রহমান (৩৫), ওহিদুল ইসলাম (৪৫), মাহাবুল (৪০) বলেন, ফুলপুর উপজেলার মায়ের দোয়া বীজ ভান্ডারের প্রোপাইটর ফখরুদ্দিন (৫৫), ধারা বাজারের বীজ বিক্রেতা খলিল ও আমতৈল মঠ বাজারের শফিকুল (৩০) ও বাহিরশিমুল বাজারের হাফেজ আল মামুনের কাছ থেকে কৃষিবিদ সিডস’র ব্রি-৩২ জাতের ধান বীজ ক্রয় করেন। বীজের প্যাকেটের গায়ে লিখা উচ্চ ফলনশীল ৩২ জাতের নাম। নিয়ম অনুযায়ী রোপনের ১৩৫-১৪৫ দিনের মাঝে ফলন সম্পন্ন হবে। কৃষকরা বলেন, বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে ২০ দিন বয়সী চারা মূল জমিতে রোপন করেন। এরপর ১৫-২০ দিন অতিবাহিত হতেই দু’চারটি করে ধানের কুশি আসতে থাকে। কাঙ্খিত ফলন থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হয় প্রত্যেকটা কৃষক। রোপনের চার মাস পর ধান হওয়ার কথা। কিন্তু সেই ধান পেকেছে এক মাসের মাথায়। তবে তা যৎসামান্য। প্রতারনার বিষয়ে জানতে চাইলে বীজ বিক্রেতা খলিল বলেন, ৩২ জাত ভেবেই বীজের প্যাকেট বিক্রি করেছেন। তিনি ফুলপুরের মায়ের দোয়া বীজ ভান্ডারের ফখরুদ্দিনের কাছ থেকে ধান বীজের প্যাকেট ক্রয় করেছেন। অভিযুক্ত ফখরুদ্দিন বলেন, ৩২ জাতের ধান বীজের প্যাকেট তিনি বিক্রি করেননি। বিক্রি করেছেন ব্রি-৪৮। এ প্রতারনার বিষয়ে অন্য কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে জানান তিনি। কৃষিবিদ সিডস’র এর ফুল্পুর হালুয়াঘাট এরিয়ার সংশ্লিষ্ট ডিলার মোরশেদ আলী বলেন, চলমান এ মৌসুমে কৃষিবিদ সিডস কোম্পানি ৩২ জাতের ধান উৎপাদন করেননি। ৩২ জাতের প্যাকেট বাজারে যারা বিক্রি করেছেন তারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। এ প্যাকেটের গায়ের লোগো তাদের কোম্পানীর নয় বলে জানান। হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, ফখরুদ্দিন একইদিনে দুই রকম কথা বলেছে। একবার বলে ব্রি-৩২ জাত বিক্রি করেছে, আবার পরবর্তীতে তা অস্বীকার করে ব্রি- ৪৮ জাতের ধান বিক্রি করার কথা বলছেন। তিনি বলেন, ধান বীজের প্যাকেটে যারাই অনিয়ম করুক, সেটা ডিলার হোক, কোম্পানী হোক বা বীজ বিক্রেতারাই হোক তা তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।