থামছে না বাবা-মা হারানোর শিশু তানহা’র কান্না
প্রকাশিতঃ ৮:০৯ অপরাহ্ণ | জুন ২০, ২০২০ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ২৩৪ বার
তোফাজ্জেল হোসেন,বাউফল(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: আট মাস বয়সী শিশু তানহার ভাব প্রকাশের সক্ষমতা না থাকলেও দৃষ্টিতে যেন বাব-মা হারানোর এক অবর্ননীয় অসহায়ত্বের ছাপ ফুটে উঠেছে। কিছুতেই থামছে শিশু তানহার কান্না। ফিটার ফিডিংয়েও কাজ হচ্ছে না। শিশু তানহার কান্না আর স্বজনদের আহাজারি দেখে কিছুতেই চোখের পানি ধরে রাখতে পাড়ছিলেন না উপস্থিত প্রতিবেশীরাও। এমনই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে পটুয়াখালীর বাউফলের ভরিপাশা গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার সকালে ঈগল-৪ লঞ্চে বাউফলের নুরাইনপুর আলগী নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ হন তানহার বাবা আসলাম শরীফ ও মা জান্নাতুল ফেরদাউস। গতকাল শুক্রবার বিকালে ঘটনাস্থলেই ভেসে ওঠে আসলামের লাশ। জান্নাতের লাশের সন্ধান পাওয়া যায় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে আলগী-তেঁতুলিয়া নদীর মিলনস্থল তালতলী পয়েন্ট এলাকায়।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, আসলাম-জান্নাত দম্পত্তি কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামের বাড়ি থেকে লকডাউনে ফেলে আসা বকেয়া বেতন তুলতে চার দিন আগে রওনা হয়ে যান জানাতের কর্মস্থল নারায়নঞ্জের সিদ্দিকগঞ্জ ইপিজেড এলাকায় একটি গার্মেন্টের উদ্দেশে। কর্তৃপক্ষের লোকজনের আশ^াসে সেখানে ছুটে গিয়েও বেতন তুলতে ব্যার্থ হয়ে দেঁড়ি না করে পূনঃরায় উঠে বসেন এমভি ঈগল-৪ লঞ্চের ডেকে বাড়ি ফেরার উদ্দেশে। দাদি আলোমতির কাছে (আসলামের মা) রেখে যাওয়া তাদের একমাত্র শিশু সন্তান তানহার টানে তড়িগড়ি করে বাড়ী ফেরা বাবা-মায়ের। আসলামের দিনমজুরীর কিছু বকেয়া আর লঞ্চের ভাড়া বাদে দু’জনার হাতে থাকা অবশিষ্ট সামন্য টাকায় কিনে নেন তারা আটমাস বয়সী প্রিয় শিশু সন্তান তানহার জন্য নতুন জামা। কিন্তু নিজ স্টেশন নুরাইনপুর ঘাটে নেমে আরো ১০-১২ জনের সঙ্গে খেয়ার নৌকায় উঠে আলগী নদী পাড় হতে গিয়ে ফিরে আসা ওই লঞ্চের ধাক্কাতেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় শিশু তানহাকে নতুন জামা পড়ানো স্বপ্ন। খেয়ার নৌকা উল্টে প্রথমে নিখোঁজ ও পরে নিহত হন ওই আসলাম জান্নাত দম্পত্তি। লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবিতে নিহত হওয়ায় দম্পত্তি আসলাম-জান্নাতের আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকায় নামে শোকের ছায়া। নাতি তানহাকে কোলে নিয়ে আসলামের মা আলোমতি বিলাপ করছেন। পানিতে ভেসে যাওয়ার সময় উদ্ধার হওয়া ট্রাবেল ব্যাগে পাওয়া নাতি তানহার জন্য তার ছেলে ও ছেলের বৌয়ের কেনা নতুন জামা দেখাচ্ছেন আর বলছেন ‘তোমরা আমার পোলা-বৌডারে আইন্যা দেও।’ আসলামের বাবা আলম শরিফ বাকরুদ্ধ হয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে কেবল তাকাচ্ছেন এদিক-সেদিক। তাদেরকে ঘিরে সান্তনার চেষ্টায় চালাচ্ছেন আশপাশের লোকজন।