বগুড়ায় বন্ধুকে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ, অতঃপর পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা
প্রকাশিতঃ ৯:৪২ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৪৪৭ বার
ডেস্ক রিপোর্টঃ বগুড়া শহরের চকলোকমান এলাকায় দিনের বেলায় ২৪ বছর বয়স্ক এক নারীকে ধর্ষণের পর মাথার চুল কেটে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসারত ওই নারী জানিয়েছেন, ঘটনার সাথে জড়িত তার স্বামী এবং স্বামীর একজন বন্ধু। ঘটনার পর থেকে তারা দুজনই পলাতক। বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নির্যাতিত নারীর ভাষ্য অনুসারে তার স্বামী এবং স্বামীর বন্ধুকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামানো হয়েছে। একই সাথে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারীর দেখভালের জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন ওই নারীর পিঠের একপাশ থেকে কোমরের নিচের অংশ পুড়ে গিয়ে বড় বড় ফোসকা পড়ে গেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ২০১০ সালে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি গ্রামের তোজাম্মেল হকের পুত্র রফিকুল ইসলামের সাথে তার বিয়ে হয়। তারা বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চকলোকমান খন্দকারপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকত। এই বাসার অদূরেই মেয়েটির বাবার বাড়ি। তাদের ঘরে ৭ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। রফিকুল আগে হানিফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি বাসে সুপারভাইজারের কাজ করত। মাঝে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ২ বছর আগে হঠাৎ করেই মোবাইলে একটি মেয়ের সাথে কথা বলার সময় সে স্বামীকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। এরপর জানতে পারে মেয়েটির সাথে স্বামীর পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। রফিকুল প্রায়ই এই বিষয়টি নিয়ে তাকে মারপিট করত।
সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি একই বিষয় দিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে স্ত্রীকে বেদম মারপিট করে রফিকুল। তাকে সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা মিলে আলোচনা করে গত ২৮ জানুয়ারি পুনরায় রফিকুলের কাছে স্ত্রী সন্তানকে রেখে আসে। কিন্তু ২৭ জানুয়ারি আবারো একই বিষয় নিয়ে স্ত্রীকে বেদম মারপিট করে রফিকুল। এরপর বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে আর ফিরে আসেনি সে। সর্বশেষ রবিবার বেলা ১২টার দিকে বাড়ির প্রাচীর টপকে রফিকুল তার এক বন্ধুকে নিয়ে ওই বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় তাদের মেয়ে পাশেই নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। রফিকুল বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করেই প্রথমে তার স্ত্রী হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বন্ধুকে দিয়ে ধর্ষণ করায়। শেষে তারা মেয়ের গলায়, বুকে ও মাথার চুলের একপাশ ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়ে গায়ে জড়ানো শাড়িতে তরল কিছু ঢেলে দেয়। এরপর ম্যাচ জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে সে এবং তার বন্ধু পুনরায় প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়।
এদিকে অগ্নিদ্বগ্ধ ওই নারীর আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন গেট ভেঙে বাড়িতে ঢুকে এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে পায়। তারা সাথে সাথে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই নারীর পিতা আলম মন্ডল জানান, তিনি দিনমজুর। কিশোর বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। এখন তার মেয়েকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার জন্য মেয়ে জামাই রফিকুল এবং তার বন্ধুর বিচার দাবি করেন।
শাজাহানপুর থানার ওসি আজিমুদ্দিন জানান, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। মামলা দায়ের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. তাহমিনা আক্তার বলেন, রোগীর শরীরের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে। একই সাথে শরীরে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ধর্ষণের বিষয়টি মেডিক্যাল চেকআপের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।