২৫ বৎসরেও পিতার পরিচয় পাননি হালুয়াঘাটের সোহেল
প্রকাশিতঃ ৪:৩৯ অপরাহ্ণ | জুলাই ০১, ২০১৯ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৫০৮ বার
ওমর ফারুক সুমনঃ একটি ঘটনা! একটি ইতিহাস!আমাদের সমাজে এখনো এমন ঘটনা ঘটে যা সিনেমার দৃশ্যকেও হার মানায়।ঘটনাটি ঘটে আজ থেকে ২৫ বৎসর পুর্বে। প্রেমের প্রলোভনে শারিরীক সম্পর্ক, অতঃপর অন্তঃসত্ত্বা। তারপর চলে ভিন্নখাতে প্রবাহের নাটক! একজনের সন্তানের দায়ভার চাপানো হয় অন্যের কাঁধে। যেই ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে রাখলেও দীর্ঘদিন পরে যার প্রকাশ ঘটে বর্তমানে।২৫ বৎসর যাবৎ প্রমান আর লোকবলের অভাবে পিতৃ পরিচয় থেকে বঞ্চিত যুবক। সমাজের লাঞ্ছনা বঞ্চনার মধ্য দিয়ে ২৫ টি বৎসর অতিক্রান্ত করতে হয় অঘটনের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া সেই শিশুটির।নাম সোহেল। দাবীকৃত পিতা হালুয়াঘাট বাজারের হাইস্কুল সংলগ্ন একেএম ইসমাইল হোসেন মৌলবীর পুত্র মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুদ। সরেজমিনে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করতে গেলে প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাবাসীরা অকপটে বিবরন দেন সেই ২৫ বৎসর আগে ঘটে যাওয়া কাল রাত্রীর কথা। সোহেলের জন্মদাতা মাতা পারুল (৩৯) বলেন, তখন আমার বয়স তেরো-চৌদ্ধ বৎসর ছিলো। মাসুদ আমাকে চলার পথে প্রায়ই উত্তপ্ত করতো। একদিন আমাকে ফুঁসলিয়ে ঘরে নিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক মেলামেশা করে। এক পর্যায়ে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি।পরে আমি মাসুদকে বিয়ের চাপ দিলে গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করে দিতে বলে। আমি রাজী না হওয়ায় আমাকে খুনের হুমকী দেয়। জালাল উদ্দিন ওরফে গেন্দা নামে অন্য আরেকজন নিরীহ ছেলের কথা বলতে বাধ্য করান।জোর করে গেন্ধার সাথে স্থানীয় মাতব্বররা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের রাতেই গেন্ধা পালিয়ে যায়। আজও পর্যন্ত তার সন্ধান আমি পায়নি। পারুলের গর্ভে জন্ম নেয়া পিতার দাবীদার সোহেল (২৫) বলেন, আমি যেদিকেই যায়, মানুষ আমাকে বলে পুংটা পুলাপান! আমার বাপ কেডা কেউ বলতে পারেনা। মাকে জিজ্ঞেস করি সেও বলে পরে পরে। বলে আগে বড় হও। আমি কাজ/কর্ম করতে পারিনা পরিচয়ের অভাবে। চাকরি করতে গেলে বলে পরিচয়পত্র লাগবে। অবশেষে মাকে চাপ প্রয়োগ করলে মা বলেন, মাহফুজুর রহমান মাসুদ আমার পিতা। অতঃপর আমি মাসুদের কাছে সন্তানের দাবী নিয়ে গেলে অস্বীকার করে আমাকে। স্থানীয় মাসুদ ড্রাইভার (৫৫) বলেন, আমরা জানি, সোহেলের আসল পিতা এই মাসুদই। মাসুদ পেটে থাকাবস্থায় স্থানীয় মাতব্বররা টাকা খেয়ে অন্য আরেক ছেলের সাথে জোর করে সোহেলের মা পারুলকে বিয়ে দিয়ে দেন। সেই ছেলে পরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু ছেলে যে মাসুদেরই তা আমরা সবাই জানি।প্রতিবেশী আমজাদ হোসেন (৫০) বলেন, সোহেলের পিতা যে মাসুদ তা এলাকার সবাই জানে। মাসুদ প্রভাবশালী বিধায় এই ঘটনা সেইদিন ধামাচাপা দিতে পেরেছিলো। প্রকৃতপক্ষে সোহেলের পিতা মাসুদ এটাই আমরা জানি। স্থানীয় প্রতিবেশী সুফিয়া খাতুন (৬০), মফিজুল ইসলাম (৪০), শাহজালাল সেখ (৫০), হাসনা (৬৫), সাবিনা (৩৫), বলেন, মাসুদের অপকর্মে সোহেল যখন তার মায়ের পেটে আসে তখন এরা খুবই অসহায় ছিলো। মাসুদসহ একটি চক্র ভয় ভীতি দেখাইয়া পারুলকে গর্ভের সন্তানসহ অন্য ছেলের সাথে বিবাহ দেয়।পরে ঐ রাতেই ঐ ছেলে পারুলকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সোহেলের আসল পিতা মাসুদ সেটাই সকলে জানান। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্ণা ঘোষ ঘটনার সত্যটা তদন্ত করে সোহেলের দাবীকৃত পিতার মিমাংসার দাবী জানান।এ বিষয়ে জানতে চাইলে হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি বিপ্লব কুমার সরকার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সোহেলের পিতার মিমাংসা একটাই সেটা ডিএনএ টেস্ট করা। এ ক্ষেত্রে সোহেলকে আদালতের স্বরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন।এ বিষয়ে সোহেলের দাবিকৃত পিতা মাহফুজুর রহমান মাসুদের কাছে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। সকল কথা আদালতে বলবেন বলে তাড়াতাড়ি কেটে পড়েন।###