আজ বৃহস্পতিবার , ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

শিরোনাম

এম্বুলেন্সে করে মাদক পাচারকালে ২৪০ বোতল ভারতীয় মদসহ একজন আটক এমপি মাহমুদুল হক সায়েমকে সি.আই.পি শামিমের সংবর্ধনা হালুয়াঘাটে ঈদে বাড়ি ফেরার পথে লাশ হল স্বামীসহ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হালুয়াঘাটের স্থলবন্দর দিয়ে ২৭টি পণ্যের আমদানী রপ্তানীর পরিকল্পনা-এমপি সায়েম হালুয়াঘাটে ২৭ হাজার দুস্থ অসহায় পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ১৩ বছর পর পদত্যাগ করলেন ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হালুয়াঘাটে ফেইসবুক গ্রুপে কোরআন তেলাওয়াত ও ইসলামী সংগীত প্রতিযোগিতা। পুরস্কার বিতরণ ‘কৃষ্ণনগরের কৃষ্ণকেশীর ‘বেহিসেবি রঙ.. হিমাদ্রিশেখর সরকার হালুয়াঘাট থেকে ফুলপুর পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা নির্মাণসহ সড়ানো হচ্ছে অস্থায়ী বাস কাউন্টার জনগণের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে থাকবে-প্রিন্স ডামি নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে আইসিইউতে পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ-প্রিন্স বাজারে পণ্যের অগ্নিমূল্যের তাপ তাদের গায়ে লাগেনা-প্রিন্স নালিতাবাড়ীতে প্রেসক্লাবের নির্বাচন, সভাপতি সোহেল সম্পাদক মনির গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে-বিএনপি নেতা প্রিন্স হালুয়াঘাটে বিএনপি নেতা প্রিন্স’র লিফলেট বিতরণ

কেমন চলছে হালুয়াঘাট সীমান্তের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো সম্প্রদায়ের জীবন

প্রকাশিতঃ ৫:২৪ অপরাহ্ণ | জুন ১৩, ২০১৮ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৬৬৬ বার

ওমর ফারুক সুমনঃ  ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটের আঁচকিপাড়া, ঝলঝলিয়া, জখমকূড়া, বুটিয়া পাড়া, গাবড়াখালি, ঘিলাভূই, নালিতাবাড়ীর পানিহাতা,বারোমারী সহ আশ-পাশের উপজেলার গারো আদিবাসীদের দিনকাল ভালো যাচ্ছেনা। এ সকল সীমান্তের পাহাড়িয়া অঞ্চলের গারোদের জীবনমানে প্রতিনিয়ত চলছে বাঁচার লড়াই। কেউ নেয় না তাদের খোঁজ-খবর। সরকার আসে সরকার যায় উন্নয়ন হয় অনেক কিছুর। কিন্তু সীমান্তবর্তী পাহাড়ী আদিবাসীদের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয় না- কথা গুলো আক্ষেপের সুরে বলেন হালুয়াঘাট উপজেলার কড়ইকান্দা গ্রামের আদিবাসী নারি ধরনী রিছিল। তার ভাষায় অভাব-অনটন, দুঃখ-দুর্দশাই যেন হালুয়াঘাট উপজেলার আদিবাসীদের নিত্যদিনের সাথী। দেশের উত্তর- পুর্বাঞ্চলের গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষে অবস্থিত পাহাড়ী জনপদ ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড়। জানা গেছে, ময়মনসিংহ,শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী, নেত্রকোনার দুর্গাপুর, ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া উপজেলায় গারো, হাজং, কোচ, বানাই, হদি, বর্মন ও বংশীসহ বিভিন্ন জাতি-গৌত্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী মিলে প্রায় ৫০ হাজার আদিবাসী পরিবারের বসবাস। এদের মধ্যে ৭০ ভাগ আদিবাসী পরিবারের সদস্যরা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। অথচ এক কালে এদের সব কিছুই ছিল। ছিল গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, গোলা ভরা ধান। কিন্তু কালের আবর্তনে সবকিছু হারিয়ে আজ তারা দিশেহারা। এখন এদের অধিকাংশ নেই নিজস্ব কোন জমি-জমা। এসব আদিবাসী পরিবারের সদস্যরা বন বিভাগের জমির উপর ঘর-বাড়ী নির্মান করে বসবাসের পাশাপাশি শ্রম বিক্রি সহ নানাভাবে পরিবারের সদস্যদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বাকি ৩০ ভাগ আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের জমি থাকলেও বন্য হাতির তান্ডবে গত ১২/১৪ বছর ধরে তাদের জমিতে কোন ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। এ কারণে অনেক আদিবাসীর জমি জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী সন্ত্রাসীরা নানা ভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে। ফলে এ উপজেলার আদিবাসীরা এখন দিন মজুর ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। জানা যায়, নালিতাবাড়ি উপজেলার বাকাকুড়া গ্রামের আদিবাসী রঘুনাথ কোচের ২ একর রেকর্ডীয় জমি সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে চাষাবাদ করতে না পেরে সে এখন পথে নেমেছে। এছাড়া নওকুচি গ্রামের পাজাই কোচনীদের জমি দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আদিবাসীদের মহিলারাই ক্ষেতে খামারে, মাঠে-ময়দানে এমনকি সংসারের সকল কাজ কর্ম করে থাকে। আর পুরুষরা বাড়ীতে বসে তাদের ছেলে মেয়েদের দেখা শুনা করে থাকে। তবে অতীতের তুলনায় অনেক আদিবাসী পুরুষরাও এখন আর ঘরে বসে থাকতে চাইছে না। বছরে ২ মাস আমন ও ইরি বোরো মৌসুমে এ উপজেলার আদিবাসী নারী-পুরুষ শ্রমিকরা কৃষির উপর শ্রম বিক্রি করে যা পায় তাই দিয়ে কোন রকমে পরিবারের সদস্যদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বাকি ১০ মাস তাদের থাকতে হয় বেকার, নির্ভর করতে হয় গারো পাহাড়ের বনাঞ্চলের উপর। আদিবাসী মহিলারা গারো পাহাড় থেকে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ ও তা বাজারে বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু গারো পাহাড়ে আগের মত এখন আর জ্বালানী কাঠ পাওয়া যায় না। যাও কিছু পাওয়া যায় তাও আবার আনতে দিচ্ছেনা বন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অংশীদাররা। দীর্ঘ ৪০ বছরেও এখানে গড়ে উঠেনি আদিবাসী শ্রমিকদের জন্য কোন কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা। ফলে বর্তমানে ময়মনসিংহের- শেরপুরের –নেত্রকোনার এই ৬ উপজেলায় আদিবাসীদের দুঃখ কষ্টের শেষ নেই। অনেক আদিবাসীদের বাড়ী ঘর গুড়িয়ে দিয়েছে বন্য হাতির দল। ১২/১৪ বছর ধরে পাহাড়ী এলাকার আদিবাসীরা প্রতিনিয়ত বন্য হাতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে আছে। গজনী গ্রামের মনেন্দ্র কোচ, হালচাটী গ্রামের সুরেন্দ্র কোচ জানান, কেরোসিন কিনতে হয় তাদের। প্রথম দিকে সরকারী ভাবে এবং বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে হাতি তাড়ানোর জন্য কেরোসিন বিতরন করা হলেও এখন তা হ”েছ না আদিবাসীদের মধ্যে। এখন আর কেউ খোঁজ খবর নেই না। সরকারী ভাবে কয়েকটি জেনারেটর দেয়া হয়েছিল হাতি তাড়ানোর জন্য। এসব জেনারেটর আর চোখে পড়ে না। এক সময় পাহাড়ী জনপদের আদিবাসীরা পাহাড়ে জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু পাহাড় উজাড় ও বন্য হাতির তান্ডবে আদিবাসীদের জুম চাষ হারিয়ে গেছে। বন্য হাতির তান্ডবে অনেক আদিবাসী গৃহহীন। সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সহায় সম্বলহীন এসব আদিবাসীদের এখন নেই পেটে ভাত, পড়নের কাপড়। পাহাড়ী আলু নানা ধরণের বন্য প্রাণী শিকার করে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে। আদিবাসীরা খুব পরিশ্রমী হয়ে থাকে। আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য এনজিও বিভিন্ন কাজ করে আসলেও তা শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। হালুয়াঘাটের জয়রামকূড়া গ্রামের পল সুরেশ বানোয়ারি বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারোদের জীবনযাত্রা এখন আগের তুললায় উন্নয়নের দিকে। গারোরা এখন শিক্ষাগ্রহন সহ কর্মসংস্থানের জন্যে ঢাকা শহরে যাওয়াই জীবনমানের বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবীষ্যতে যারা অতি দরিদ্র তাদের সংকট অনেকাংশে লাগব হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। আচকিপাড়া গ্রামের সুফলা ম্রং(৫৫) জানান, সাবেক ট্রাইভাল এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বিজয় ম্রং এর কারনে তারা তাদের সকল সম্পত্তি হারিয়েছেন। এ রকম আরো অনেক গারোই অভিযোগ করেছেন তাদের এই আদিবাসী নেতা বিজয় ম্রং এর বিরুদ্ধে। শেরপুর জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট,ধোবাউড়া উপজেলায় গারো আদিবাসীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরা নানাদিক থেকে এগিয়ে গেছে। গারো আদিবাসী নারী-পুরুষ দেশের বিভিন্ন ¯’ানে কর্মক্ষেত্র তৈরী করে নিয়েছে। আর নানা দিক থেকে অবহেলিত ও পিছিয়ে রয়েছে কোচ সম্প্রদায়ের লোকজন। তাদের অভিযোগ ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন থেকেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এখানে আদিবাসীরা তুলনামূলক ভাবে পায়নি ভিজিডি ভিজিএফ কার্ড, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা। শিক্ষায়-দিক্ষায়ও কোচ আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা রয়েছে অনেক পিছিয়ে।

Shares