গত বছর অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ঘটনায় মুখ না খোলায় সমালোচনার মুখে পড়েন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি।
রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। তবে মিয়ানমার সরকার তা অস্বীকার করে বলে আসছে, ওই অভিযান চালানো হয়েছে ‘সন্ত্রাসীদের বিরদ্ধে’।
সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের আন্দোলনের কারণে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকা সু চিকে ২০০৫ সালে ফ্রিড অব এডিনবরা সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। সে সময় তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তুলনা করে ‘নিপীড়ণের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ লড়াইয়ের প্রতীক’ বলা হয়।
রোহিঙ্গা সঙ্কট বিষয়ে এডিনবরা নগর কর্তৃপক্ষের লর্ড প্রভোস্ট ফ্রাঙ্ক রস গত নভেম্বরে সু চির কাছে লেখা এক চিঠিতে তার ‘সেই বিশাল সাহস এবং প্রভাব’ কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু সু চির কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ফ্রাঙ্ক রস গত বৃহস্পতিবার তাকে দেওয়া সম্মাননা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন।
এডিনবরার ২০০ বছরের ইতিহাসে সু চির আগে ১৮৯০ সালে আইরিশ জাতীয়তাবাদী নেতা চার্লস পারনেলের এই পুরস্কার বাতিল করা হয়েছিল কেলেংকারির এক ঘটনায়।
বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সম্মতিপত্রে সই করে। এর ভিত্তিতে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয় এবং ১৬ জানুয়ারি ওই গ্রুপের প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়।
এরপর প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে আট হাজারের মতো রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হলেও কেউ এখনও রাখাইনে ফিরতে পারেনি।
এমন পরিস্থিতিতে সু চি গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে এক বক্তৃতায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকেই উদ্যোগী হতে বলে মন্তব্য করে নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “তাদের (রোহিঙ্গা) ফেরত পাঠানোর কাজটা বাংলাদেশের। আমরা কেবল তাদের স্বাগত জানাতে পারি।… আমার মনে হয় বাংলাদেশ কত দ্রুত প্রত্যাবাসন শেষ করতে চায় সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে যারা আশ্রয় নিয়ে আছেন, তারা মিয়ানমারে ফিরলে কোথায় রাখা হবে- সেই জায়গাও ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো সময়সীমা ঠিক করা মিয়ানমারের জন্য কঠিন, কেননা ‘কাজটি করতে হবে বাংলাদেশকে’।