মনের পশুপ্রবৃত্তি ত্যাগ করাই কুরবানির তাৎপর্য -মাহমুদ আবদুল্লাহ
প্রকাশিতঃ ১০:১৬ অপরাহ্ণ | আগস্ট ২০, ২০১৮ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৫৯১ বার
ঈদুল আযহা। মুসলিমদের সবচেয়ে বড় দু’টো ধর্মীয় উৎসবের একটি।
বাংলাদেশে এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ নামে পরিচিত। ঈদুল আযহা ও কুরবানির মূল তাৎপর্য হচ্ছে- মনের পশুপ্রবৃত্তি ত্যাগ করে মহান সৃষ্টিকর্তার সমীপে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। কুরবানির মাধ্যমে ত্যাগের আনন্দ ও উৎসবে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। মুসলমানগণ ঈদোৎসবের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্র, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সব মুসলমান মিলেমিশে ঈদের আনন্দ সমভাগ করে নেন, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার ভুলে খুশিমনে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করেন।প্রতিবছর মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল আযহার পর গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু কুরবানি দিয়ে ঈদ উদযাপন করা হয়।পৃথিবীর শুরুলগ্ন হজরত আদম (আ.)-এর সময় থেকেই কুরবানির যে ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে নবী-রাসুলেরাও আল্লাহর নামে কেবল তারই সন্তুষ্টির জন্য কুরবানির পথ দেখিয়ে গেছেন। এ কুরবানি কেবল পশু বিসর্জন নয়, মনের ভেতরের পশুত্ব, নিজের ক্ষুদ্রতা, নিচুতা, স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা, আমিত্ব ও অহংকার ত্যাগই কুরবানির মূলকথা এবং এটাই ইসলামের অনুপম শিক্ষা।
মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা পবিত্র ঈদুল আজহার কুরবানি পর্ব এবং অপরিহার্য এ ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রবর্তক। স্রষ্টাপ্রেমে আত্মোৎসর্গিত মহান ব্যক্তি হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ প্রাণাধিক প্রিয় পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় নিবেদনের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন, তা বিস্ময়কর শুধু নয়; এক বিরাট শিহরণ জাগানো ঘটনারই মূর্ত আলেখ্য। হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনে কুরবানি দেওয়ার মর্মস্পর্শী ঘটনা ও স্মৃতিকে জীবন্ত করে রাখার জন্যই পশু কুরবানির এ বিধান। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ত্যাগের চরম পরীক্ষায় আল্লাহর দরবারে উত্তীর্ণ হয়ে যান। এর পর থেকে বিশ্বের মুসলমানদের জন্য জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পবিত্র ঈদুল আজহার পর হালাল পশু কুরবানি করার রেওয়াজ চালু হয়।
বর্তমান সমাজে কুরবানির পশু ক্রয় নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করা হয়। কে কত টাকা খরচ করে পশু ক্রয় করেছে, কার পশু কত মোটা, কত সুন্দর। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এগুলোর গোশত ও রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত-৩৭)
সুতরাং আল্লাহ তা দেখেন না; বরং তিনি দেখতে চান কার অন্তরে কতটুকু তাকওয়া বা পরহেজগারি আছে। কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগ ও উৎসর্গের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই উদ্দেশ্য। এর দ্বারা আল্লাহ মানুষের আন্তরিকতা যাচাই করেন। মূলত আল্লাহর কাছে তাকওয়া বা খোদাভীতিই আসল কথা। তাই একজন মুসলমান হিসেবে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনে দুটো প্রবৃত্তি রয়েছে—একটি পশুপ্রবৃত্তি, অপরটি বুদ্ধিবৃত্তি। পশুপ্রবৃত্তিকে সংযত রেখে বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োগে মানুষ যখন জীবনকে সুন্দর, সুষ্ঠু ও সুপথে পরিচালিত করে, তখন একে আদর্শ জীবন বলে অভিহিত করা হয়।
আল্লাহ আমাদের কুরবানির মর্মকথা ও ঈদুল আজহার প্রকৃত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য অনুধাবন করার শক্তি প্রদান করুন।