আজ বৃহস্পতিবার , ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

শিরোনাম

এম্বুলেন্সে করে মাদক পাচারকালে ২৪০ বোতল ভারতীয় মদসহ একজন আটক এমপি মাহমুদুল হক সায়েমকে সি.আই.পি শামিমের সংবর্ধনা হালুয়াঘাটে ঈদে বাড়ি ফেরার পথে লাশ হল স্বামীসহ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হালুয়াঘাটের স্থলবন্দর দিয়ে ২৭টি পণ্যের আমদানী রপ্তানীর পরিকল্পনা-এমপি সায়েম হালুয়াঘাটে ২৭ হাজার দুস্থ অসহায় পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ১৩ বছর পর পদত্যাগ করলেন ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হালুয়াঘাটে ফেইসবুক গ্রুপে কোরআন তেলাওয়াত ও ইসলামী সংগীত প্রতিযোগিতা। পুরস্কার বিতরণ ‘কৃষ্ণনগরের কৃষ্ণকেশীর ‘বেহিসেবি রঙ.. হিমাদ্রিশেখর সরকার হালুয়াঘাট থেকে ফুলপুর পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা নির্মাণসহ সড়ানো হচ্ছে অস্থায়ী বাস কাউন্টার জনগণের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে থাকবে-প্রিন্স ডামি নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে আইসিইউতে পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ-প্রিন্স বাজারে পণ্যের অগ্নিমূল্যের তাপ তাদের গায়ে লাগেনা-প্রিন্স নালিতাবাড়ীতে প্রেসক্লাবের নির্বাচন, সভাপতি সোহেল সম্পাদক মনির গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে-বিএনপি নেতা প্রিন্স হালুয়াঘাটে বিএনপি নেতা প্রিন্স’র লিফলেট বিতরণ

এসপি নুরুল ইসলামকে কোনদিন ভুলতে পারবেন না ময়মনসিংহের মানুষ

প্রকাশিতঃ ১০:২৭ অপরাহ্ণ | আগস্ট ১২, ২০১৮ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৭৮১ বার

স্টাফ রিপোর্টার
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলামকে বিপিএম (বার) পিপিএম ময়মনসিংহ থেকে বিদায় দিলেও উনার কথা ভুলতে পারবেন না ময়মনসিংহবাসী। ময়মনসিংহের পুলিশের ইতিহাসে তিনি স্বর্ণাক্ষরে থাকবেন। তিনি কুমিল্লা জেলায় বদলী হলেও তাকে বহুদিন মনে রাখবে ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দারা। ময়মনসিংহে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক নিয়ন্ত্রণে তিনি ছিলেন অপরাধীদের কাছে বড় এক আতংকের নাম। এমনকি সরকারি দলের সন্ত্রাসী, মাস্তানরাও তার ভয়ে সব সময় তটস্থ থাকত। এছাড়া তার সময়ে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের বিশেষ সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ শ্লোগানের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সৈয়দ নুরুল ইসলাম। পুলিশী কর্মজীবনের শত ব্যস্ততা আর নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও কত যে কী করার আছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। একজন সৈয়দ নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ভিন্নতায় অনন্য হয়ে উঠে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ। ইভটিজিং, জঙ্গিবাদ ও মাদক বাণিজ্যসহ সকল প্রকার অপরাধ নির্মূলে তার সাহসী ভূমিকা নজর কাড়ে বাংলাদেশ পুলিশেরও। অসংখ্য ইতিবাচক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তিনি হয়েছেন ময়মনসিংহের আইকন। দেড় শতাধিক অসুস্থ অসহায় মানুষকে নিজের বেতনের টাকায় চিকিৎসা ও আর্থিক সহযোগীতা, দেড় শতাধিক এতিম অসহায়কে আর্থিক সহযোগীতা ছাড়াও পড়ালেখার সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করে গেছেন তিনি। এমনকি নিজ জেলা চাপাইনবাগঞ্জের ৪ শতাধিক দরিদ্র, অসহায় মানুষকে ময়মনসিংস্থ নিজের কর্মস্থলে এনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েছেন তিনি। এছাড়াও পুলিশের ও অসহায় পরিবারের রোগীদের জরুরি রক্তের প্রয়োজনে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ব্যক্তি উদ্যোগে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। রক্তদাতাকে প্রেরণা দিতে এই পুলিশ সুপারের ব্যক্তিগত খরচে দেওয়া হয়েছে নানা প্রণোদনা পুরস্কার। দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মুমূর্ষ রোগীদের জীবন বাঁচাতে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের এক অনুকরণীয় , অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত সৈয়দ নুরুল ইসলাম। দরিদ্র, অসহায় এবং নির্যাতিত নারীদের ভোগান্তি লাঘবেও কাজ করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। সৈয়দ নুরুল ইসলামের অনুপ্রেরনায় নির্যাতনের শৃঙ্খল ছিঁড়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছেন ময়মনসিংহের বিভিন্ন গ্রামের অনেক দরিদ্র অসহায় নারী। দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে অটোরিকশা কিনে দিয়েছেন সৈয়দ নুরুর ইসলাম। মাদকবিরোধী কর্মকান্ডে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পাশাপাশি মাদক থেকে দূরে থাকার আহ্বান নিয়ে ময়মনসিংহে অবিরাম কাজ করেছেন সৈয়দ নুরুল ইসলাম। জেলার ১৪ টি থানা সদর এমনকি ইউনিয়নগুলির পাড়া-মহল্লায়, গ্রামেগঞ্জে, স্কুল-কলেজে কমিউনিটি পুলিশিং-এর মাধ্যমে প্রচারাভিযান চালিয়েছে সৈয়দ নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ। ময়মনসিংহের প্রায় প্রতিটি বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভটিজিংসহ সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে গেছে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতেও কাজ করেছেন এই কর্মকর্তা। শুধু মানবিক গুণাবলির দিক দিয়েই নয়, পেশাগত দক্ষতায়ও তিনি এগিয়ে রয়েছেন অনেক দূর। কমিউনিটি পুলিশিং-এর মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছানো, হতদরিদ্র অসহায় নারীদের জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের স্কুলে স্কুলে মাদক ও জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা তথা জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি রেখেছেন বিশেষ ভূমিকা। নারায়াণগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ এসে যোগদানের পর থেকেই এ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি শক্ত হাতে। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব করে গড়ে তুলেনে। তিনি পুলিশি সেবা এক রকম জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হন। পাশাপাশি যানজট নিয়ন্ত্রণে তার অর্জিত সাফল্য পুরো পুলিশ বাহিনীর মুখ উজ্জ্বল করে। তার একক তৎপরতায় কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য ময়মনসিংহ জেলা একটি রোলমডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিদায়ী এসপির বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনেকে ময়মনসিংহ প্রতিদিনের কাছে এমন মন্তব্য করেন। ময়মনসিংহে যোগদানের পর থেকেই এ জেলার দায়িত্বে থাকাবস্থায় তিনি শক্ত হাতে এখানকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন। তিনি অপরাধী গ্রেফতারে জেলাজুড়ে একের পর এক সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেন। এরফলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দ্রুত সাফল্য অর্জিত হয়। প্রায় সকল কার্যক্রমে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করায় তার এ অভিযান জনমনে প্রশংসিত হয়। তবে তার এ সাফল্যের পেছনে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, তিনি আইনশৃংখলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী-পেশার লোকজনকে একত্রিত করে পরিকল্পিতভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করতেন’। তার নেতৃত্বে পরিচালিত হয় জেলাব্যাপী মাদকবিরোধী যৌথ সাঁড়াশি অভিযান। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা , হেরোইন , হাজার হাজার লিটার মদ উদ্ধার করেন তিনি। একই সঙ্গে অসংখ্য মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীকে গ্রেফতার করা হয়। এর ফলে জেলা মাদকমুক্ত হতে থাকে। একপর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। বড় মাপের অপরাধী গ্রেফতার করায় জনমনে তার ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। আর এতে করেই সন্ত্রাসী, মাস্তান, চাঁদাবাজ ও বখাটেদের ভিত কেঁপে ওঠে। এর ফলে জেলাবাসী স্বস্তিতে থাকেন । তার মত সাহসী এসপি প্রতিটি জেলায় থাকা প্রয়োজন বলে জানান জেলাবাসী। সার্বিকভাবে জেলা পুলিশের সকল কর্মকান্ডে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সৈয়দ নুরুল ইসলাম। শত ব্যস্ততা আর নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও কত যে কী করার আছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। একজন সৈয়দ নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ভিন্নতায় অনন্য এখন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ। গতকাল শনিবার ময়মনসিংহ কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের আয়োজনে থানা ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলামের বিদায় সংবর্ধনা। কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদুল ইসলামের (পিপিএম) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহরিয়ার মিয়াজি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কোতয়ালী সার্কেল আল আমীন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে পত্রিকাটির সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক এসপি নুরুল ইসলামের হাতে তুলে দেন ময়মনসিংহে এই এসপির কর্মকালীন সময়ে তার নামে প্রকাশিত পেপারকাটিং (আ্যালবাম) স্মরনিকা। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। অনেকে কাঁদেন। তাদের কান্না দেখে অন্যরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। অনুষ্ঠানে যোগদেন জেলার অনেক মানুষ। এই ভালোবাসার কারণ একটাই। এলাকার সন্ত্রাস নির্মূলে এসপির দেওয়া বক্তব্য তাদের খুব মনে ধরেছিল। এমন ভালো লাগার মানুষটি ময়মনসিংহ ছাড়বেন শুনেই তাদের এ ছুটে আসা। এরআগেও ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশ ও জেলা পুলিশ, পওরসভাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যসহ জেলার সকল পর্যায়ের মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের বিদায় বেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ঝড় ওঠে। বিদায় উপলক্ষে সর্বস্তরের মানুষ তাঁর নানা কাজের প্রশংসা করে। ফেসবুকে নিজের ওয়ালে তারা লিখিছেন মানুষের সেবা করেই এই খ্যাতি অর্জন করেছেন। অবিরাম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং শুভকামনা রইল এই মহান মানুষটির জন্য। আমরা চাইলেই এই সমাজ তথা দেশকে বদলে দিতে পারি। আমরা চাইলেই একটা পরিবর্তন আনতে পারি। যে পরিবর্তনের শুরুটা করে দিয়ে গেছেন সৈয়দ নুরুল ইসলাম। লিখেছেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তাও। তারা লিখেছেন, আমাদের স্যার পুলিশের পেশাগত মানোন্নয়নে সার্বিক কাজ করেছেন। ময়মনসিংহে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ময়মনসিংহের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিক সমাজসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর ছিল সখ্যতা। পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহের মানুষ সাদা মনের । যতদিন বেঁছে থাকব ময়মনসিংহবাসীকে আমি ভুলতে পারবো না ।

Shares