রোহিঙ্গা শিশুদের আগে জবাই তারপর পুড়িয়ে হত্যা
প্রকাশিতঃ ৯:৫৮ অপরাহ্ণ | জুলাই ০১, ২০১৮ । এই নিউজটি পড়া হয়েছেঃ ৩৯৩ বার
সীমান্তবার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমার বরাবর অস্বীকার করে এলেও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধনের ভয়াবহ চিত্র তুলে এনেছে ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মিরর। রোহিঙ্গা শিশুদের জবাই করে হত্যাসহ তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার তথ্য প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
প্রতিবেদনে মিরর ২৫ বছর বয়সী ফাতেমা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারীর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে এবং নানা তথ্য-উপাত্তের বরাতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে এ ব্রিটিশ গণমাধ্যম।
মিরর বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী, রোহিঙ্গা শিশুদের জবাই করে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। কোনো কোনো শিশুকে আবার আকাশে ছুঁড়ে মেরে, চাপাতি দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করার কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
মিররের বিশেষ প্রতিনিধি টম প্যারোর কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে এসব তথ্য সংগ্রহ করেন। বিভিন্ন রাষ্ট্র যখন রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সোচ্চার তখনই এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এলো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
এদিকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের সমালোচনা করে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুও শনিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন দ্য হিন্দু বলছে, কেবল মুসলিম রোহিঙ্গারাই নন, রাখাইনে নির্যাতিত হয়ে কক্সবাজারের ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ১০১টি রোহিঙ্গা হিন্দু পরিবারও নিজেদের ভূমিতে ফিরে যেতে চান।
এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আরও দ্রুত করতে তাদের সহায়তা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে রেডক্রস। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে সার্বিক সহায়তার ওপর জোর দিয়েছেন রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট পিটার মরার। গত সপ্তাহে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য যা করা হচ্ছে তা এখনও পর্যাপ্ত নয়। আমাদের আরও কাজ করার আছে। যাতে করে তারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে।’
মিয়ানমার সরকার দাবি করছে, রাখাইনে নির্মিত আবাস প্রকল্পে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত তারা। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার মতো কোনও পরিবেশ মিয়ানমার তৈরি করেনি।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত নতুন আবাসস্থল বসবাসের উপযোগী হয়েছে বলে দাবি করে মিয়ানমারের অভিবাসন কর্মকর্তা উইন খাইং জানান, তার দেশ প্রতিদিন দেড়শ জন রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত আছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার সরকার। সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে চার দশক ধরে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত হামলার অভিযোগ তুলে সেনা অভিযানের নামে নৃশংসতা শুরু হলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এদের আশ্রয় হয়েছে কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’বলেও আখ্যা দিয়েছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা নিপীড়নকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সমস্ত অভিযোগই বরাবরের মতো অস্বীকার করে আসছে।